টেথিস সাগর
টেথিস সাগর (Tethys) মধ্য ভূতাত্ত্বিকযুগীয় সমুদ্রবিশেষ। পার্মো-ট্রায়াসিক যুগে (২৮.৬ থেকে ২০.৮ কোটি বছর আগে) অবস্থিত প্রাচীন সুবৃহৎ মহাদেশ প্যানজিয়া খন্ডিত হওয়ার ফলে গঠিত বহু পুরনো সমুদ্রপথের নাম টেথিস। এ সমুদ্রপথ উত্তর গোলার্ধের লরেশিয়া মহাদেশীয় ভূখন্ড ও দক্ষিণ গোলার্ধের গন্ডোয়ানাল্যান্ডকে দ্বিখন্ডিত করে। প্রায় সাড়ে সাত কোটি বছর আগে (ক্রিটেসিয়াস) টেথিস মহাসাগর বিশ্বের ১০০ উত্তর থেকে ২৫০ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ইউরোপের দক্ষিণাংশ, ভূমধ্যসাগর, উত্তর আফ্রিকা, ইরান ও হিমালয় অঞ্চল যা সম্ভবত মায়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল। আলপাইন গিরিজনির স্থানও ছিল এটাই। আজকের ভূমধ্যসাগর পুরাতন টেথিস অববাহিকারই ক্ষুদ্র অবশিষ্টাংশ বলে ধারণা করা হয়। টেথিস সমুদ্রপথ খুঁজে পাওয়া ও নামকরণের কারণ ছিল মধ্যজীবীয় সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যকার আশ্চর্য মিল। প্রাণিকুলের এ বিশাল সমাবেশের মধ্যে ছিল বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল, স্পঞ্জ, অ্যামোনয়েড ও অন্যান্য শামুক জাতীয় জীব। এইসব প্রাণীর জীবাশ্ম টেথিস সমুদ্রের মুখোমুখি সুবৃহৎ মহাদেশের প্রান্তিক রেখায় অগভীর সোপানে বিশাল এলাকা জুড়ে জমে থাকা ঘন কার্বোনেট শিলায় পাওয়া যায়। ভারতীয় ও আফ্রো-আরবীয় প্লেটের সঙ্গে ইউরোপীয় প্লেটের সংঘর্ষের কারণে সৃষ্ট আলপাইন-হিমালয় মহাপর্বত উৎক্ষেপের ফলে টেথিস মহাসাগর মধ্য নবজীবীয় যুগের দিকে বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও পূর্বে ভারত-মায়ানমার পর্বতমালা টেথিস থেকে নেমে আসা টেথিসাইড নামে পরিচিত বৃহৎ গিরিজনিক কমপ্লেক্সের একটি অংশ। হিমালয় টেথিসের (তিববতীয়) একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ক্যামব্রো-অরডোভিসিয়ান (৫৭-৪৩.৮ কোটি বছর আগে) থেকে নবীন ইয়োসিন (প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বছর আগে) পর্যন্ত বলতে গেলে অবিচ্ছিন্ন পাললিক অনুবর্তিতা। পাললিক বিরতি অনুল্লেখযোগ্য শুধু নবীন কার্বনিফেরাস (প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে)। এ ছাড়া প্রধানত প্লাটফর্ম টাইপের পললের এ ঘন সূতপের সঙ্গে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ২০০০ কিমি-এর অধিক সম্পূর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিস্ময়কর পর্ব ধারাবাহিকতার সাযুজ্য রয়েছে। হিমালয়ের সম্পূর্ণ উত্তর দিক জুড়ে টেথিয়ান প্লাটফর্ম পলল গভীরতর ও সমুদ্রচর পললের সকল লক্ষণ নিয়ে ফ্লিশ ফেসিসে পরিবর্তিত হচ্ছে। [মাহমুদ আলম]