টিকাদান

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:১২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

টিকাদান (Vaccination)  সুস্থ ব্যক্তির শরীরে সুনির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে অনুরূপ জীবাণু কর্তৃক সম্ভাব্য সংক্রমণরোধের একটি প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা। সব টিকারই অপরিহার্য উপাদান অ্যান্টিজেন অর্থাৎ যে বস্ত্ত বা বস্ত্তগুলিকে শরীর ‘আপন নয়’ তথা বহিরাগত বলে শনাক্ত করে এবং শরীর নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নির্দেশিত উপায়ে একে প্রতিঘাত করে ফলে অনাক্রম্যতা গড়ে ওঠে। টিকায় গোটা ব্যাকটেরিয়া কোষ, ভাইরাস কণা বা জীবাণুর থেকে পৃথকীকৃত পরিশুদ্ধ রাসায়নিক উপাদান হিসেবে অ্যান্টিজেন বিদ্যমান থাকে।

রোগজীবাণুর জৈবরাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বিশেষত কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের টিকায়, গোটা জীবাণু দ্বারা টিকা তৈরি করা হয়। এতে জীবাণুকে মেরে অথবা জীবাণুর বংশানুসৃতির পুনর্বিন্যাস ঘটিয়ে রোগ উৎপাদন ক্ষমতা বিনষ্ট করে এটিকে জীবন্ত ব্যবহার করা হয়। রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতন্ত্রের প্রতিরোধ গড়ে তোলার ভিত্তি বস্ত্তত অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরিতেই নিহিত। অর্থাৎ অনাক্রম্য কোনো ব্যক্তি ‘আপন নয়’ এমন বস্ত্ত বা অ্যান্টিজেন দ্বারা আক্রান্ত হলে অনাক্রম্যতন্ত্র উজ্জীবিত হয়ে ওঠে এবং অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।             

কোন ব্যাক্তি জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে অ্যান্টিজেনের মোকাবিলায় শরীর থেকে অ্যান্টিবডিগুলি অ্যান্টিজেনের সঙ্গে মিলিত হয়ে সুনির্দিষ্ট মিশ্র তৈরি করে এবং ফলত রোগজীবাণু নিষ্ক্রিয় ও তাদের বংশবৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং রোগসৃষ্টির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। অনাক্রম্যকরণ প্রায়শই টিকায় ব্যবহূত অ্যান্টিজেনের স্মৃতি অনাক্রম্যতন্ত্রে দীর্ঘকাল ধরে রাখে, যা তাকে দীর্ঘমেয়াদি অনাক্রম্যতা যাগায়। তাই দেখা যায়, একটি টিকা নির্দিষ্ট একটি রোগের বিরুদ্ধেই কাজ করে যে জন্য বিভিন্ন রোগের ( পোলিও, ডিপথেরিয়া, যক্ষা, ইত্যাদি) জন্য বিভিন্ন ধরনের টিকা রয়েছে।

শিশুদের ছয়টি রোগনিবারক কার্যকর টিকা আছে। রোগগুলি হলো ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টঙ্কার, পোলিও, হাম ও যক্ষ্মা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ ৬টি রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী শিশুদের অনাক্রম্যকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে ১২ থেকে ২৩ মাস বয়সী মাত্র ২% শিশুকে এসব রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যকরণ করা হয়েছিল। ১৯৮০-র দশকের শেষভাগে গৃহীত সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের মধ্যে প্রায় ৭৪% শিশুকে অনাক্রম্যতার আওতায় আনা সম্ভব হয় এবং ১৯৯৮ সালের দিকে কোনো কোনো টিকার ক্ষেত্রে এটি ৮৫ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছায়। শিশুদের সর্বজনীন অনাক্রম্যকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। দেশব্যাপী জাতীয় টিকা দিবস পালন এ সাফল্যে যথেষ্ট অবদান রেখেছে। এ দিন বহু স্বেচ্ছাসেবকের সক্রিয় সহযোগিতায় সারাদেশে ছড়ানো সবগুলি সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাদানের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। জাতীয় টিকা দিবস পালনের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই এ দিবস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারকার্য চলে এবং এতে বিশেষত মায়েদেরকে ওই নির্দিষ্ট দিনে নিকটস্থ টিকাদান কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করা হয়।

অন্যান্য টিকার মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশে পুনর্বিন্যস্ত ডিএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসরোধী টিকা পাওয়া যায়। মূল্য বেশি হওয়ায় অল্পসংখ্যক লোকই এটি গ্রহণ করতে পারে। ১৯৬০-এর দশকে মৃত কলেরা জীবাণু থেকে তৈরি টিকার ইনজেকশন ছিল কলেরা প্রতিরোধ কর্মসূচির প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে মাঠ পর্যায়ের এবং ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান সিয়াটো কলেরা রিসার্চ ল্যবরেটরি (PSCRL), বর্তমানে  আইসিডিডিআর,বি সংস্থার পূর্বসূরি কর্তৃক পরিচালিত মাঠপর্যায়ের ব্যাপক সমীক্ষা থেকে এ টিকা স্পষ্টতই অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয় এবং ফলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ টিকার ব্যবহার বন্ধের সুপারিশ করে। বর্তমানে কলেরার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর টিকা নেই। ব্যাসিলারি আমাশয় এবং রোটা-ভাইরাস উদরাময়ের ক্ষেত্রেও অভিন্ন অবস্থা বিরাজিত, তবে বর্তমানে প্রধানত আইসিডিডিআর,বি-র উদ্যোগে এক্ষেত্রে গবেষণা চলছে।

বাংলাদেশে ব্যাপক টিকাদানের ব্যয়ের চিত্রটি উল্লেখযোগ্য। টিকা উদ্ভাবন অত্যন্ত ব্যয়বহুল, উন্নত প্রযুক্তির বিষয় এবং উন্নয়নশীল দেশের সাধ্যাতীত। কিন্তু অনুন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন, দূষিত খাবার পানি, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণঘটিত কিছু রোগ বলতে গেলে উন্নয়নশীল দেশের নিজস্ব। সাধারণ একজন বাংলাদেশীর পক্ষে উন্নত দেশে উদ্ভাবিত টিকাগ্রহণ যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য, কেননা বাংলাদেশে মাথাপিছু স্বাস্থ্য-বাজেট মাত্র ৩ ডলারের মতো, যা শুধু একটি রোগের টিকার খরচের চেয়েও কম। বর্তমানে গোটা দুনিয়ায় ছয়টি রোগের বিরুদ্ধে  সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি প্রদত্ত টিকাগুলি বহুকাল পূর্বেই উদ্ভাবিত হয়েছিল। অনেক আগেই সেই খরচা উঠে গেছে। বর্তমানে যেকোনো উন্নয়নশীল দেশ অপেক্ষকৃত কম খরচে সহজলভ্য ওইসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিকাগুলি উৎপাদন করতে পারে। তারপরও বর্তমানে বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি প্রদত্ত ৬টি টিকাদানের মাধ্যমে একটি শিশুকে সম্পূর্ণ অনাক্রম্যকরণে খরচ পড়ে ১২ মার্কিন ডলার। বর্তমানে বাজারে লভ্য ও অদূর ভবিষ্যতে সম্ভাব্য অন্যান্য টিকার মাধ্যমে গণ-অনাক্রম্যকরণ দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত বিধায় মোটামুটিভাবে সর্বজনকে টিকার আওতায় আনতে দীর্ঘসময় লাগবে।

অধিকাংশ টিকা ইনজেকশন হিসেবে পেশীতে প্রয়োগ করা হয়। সেখান থেকে টিকা রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে বিক্রিয়া করে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টিকার উন্নয়নে দেখা গেছে, মুখে খাওয়ার ফোটা বা পিল হিসেবে এর ব্যবহার বেশ কার্যকর। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের খাদ্যনালী টিকার মাধ্যমে এন্টিজেন গ্রহণে সক্ষম এবং সেখান থেকে এন্টিজেনকে শরীরের প্রয়োজনীয় অংশে প্রেরণ করে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারে। টিকাদানের এ পদ্ধতিকে বলা হয় মুখে খাওয়ার টিকাদান পদ্ধতি, যা সুলভ ও সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং টিকা গ্রহণকারীদের দ্বারা সপ্রশংস অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।

খাবার টিকা (Oral vaccine)  কোনো নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক গড়ে তোলার জন্য যখন কোনো সুস্থ মানুষকে সেই রোগের বিশেষ উপাদান মুখে প্রয়োগ করা হয়। টিকার উপাদান হলো কোনো ক্ষতিকর রোগজীবাণুর অংশবিশেষ, যাকে এন্টিজেন বলা হয়। এন্টিজেনের সাহায্যে রোগ জীবাণু শরীরে রোগের প্রকাশ ঘটায়। এ এন্টিজেনকে শরীর নিজস্ব অংশ হিসেবে বিবেচনা না করে বহিরাগত হিসেবে গণ্য করে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এ বহিরাগত এন্টিজেনের মোকাবেলায় এন্টিবডি উৎপন্ন করে। সাধারণত রোগজীবাণুর বহিরাংশে এন্টিবডি এন্টিজেনের সঙ্গে মিলিত হয়ে জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এন্টিজেন টিকায় পূর্ণাঙ্গ কোষ হিসেবে কিংবা জীবাণু থেকে বিচ্ছিন্ন রাসায়নিক উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় টিকা জীবাণুর স্মৃতি ধারণকে উন্নত করে। ফলে পরবর্তীতে শরীরে জীবাণুর আক্রমণ হলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এন্টিজেনকে দ্রুত সনাক্ত করে এবং প্রতিরোধক এন্টিবডি উৎপন্ন করে সাথে সাথে জীবাণুর কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।

বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যবহূত ছয়টি টিকার মধ্যে একটি টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। এ টিকাটি হলো পোলিও টিকা। ডিপথেরিয়া,  হুপিং কাশি, টিটেনাস,  হাম এবং যক্ষ্মা। অপর পাঁচটি টিকা ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। অন্ত্রের রোগসমূহে, যেমন ডায়রিয়া (বিশেষ করে কলেরা, রক্ত আমাশয় এবং রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া) এবং টাইফয়েড জ্বরের টিকা উন্নত করা হচ্ছে। যেহেতু এ রোগসমূহ আন্ত্রিক, সেহেতু এ টিকা মুখে প্রয়োগ করা হলে সংক্রমণের স্থানে ভালো প্রতিরোধক গড়ে উঠবে এ ধারণা এর পেছনে ক্রিয়াশীল। বাংলাদেশে কলেরা এবং ডিসেন্ট্রির টিকা পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। আইসিডিডিআরবি’র মাধ্যমে সম্ভবত খুব শীঘ্রই মাঠ পর্যায়ে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে একটি মুখে খাওয়ার টিকাসহ কিছু টিকা প্রয়োগ করা হবে।

ডিপিটি টিকা (DPT Vaccine)  তিনটি রোগ ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি এবং ধনুষ্টংকার-এর জন্য একত্রে একটি মাত্র টিকা দেওয়া হয়। টিকাটিতে ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টংকার, হুপিংকফ রোগের জীবাণু ব্যাকটেরিয়াকে অকার্যকর করার উপাদান রয়েছে যা এ সকল রোগের জীবাণুকে মেরে ফেলে। ডিপিটি রোগ প্রতিরোধে ২, ৪ এবং ৬ মাস বয়সে এ টিকা দেওয়া হয়। অতিরিক্ত হিসেবে আরও দুটি টিকা দেওয়া হয় ২ বছর ও ৫ বছর বয়সে।

১৯৮০ সাল পর্যন্ত শিশুদের জন্য এ সকল মরণব্যাধি রোগের প্রতিরোধের জন্য এ তিনটি টিকা ব্যবহার ছিল যত্রতত্রভাবে গুরুত্বহীনতার সঙ্গে। শুধু ১-২% শিশু ডিপিটি গ্রহণের সুযোগ পেত তার মধ্যেই বেশিরভাগই ছিল শহরের। ১৯৮০ সালের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে ‘সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির’ মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগের ওপরে টিকাদানে সফলতা পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এধরনের সফলতা প্রশংসনীয় যেখানে রয়েছে প্রচুর সাংগঠনিক জটিলতা এবং ব্যাপক আর্থিক সংকট। গ্রামগুলিতে জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে যে ধরনের সফলতা এসেছে তার মাধ্যমে বুঝা যায় এধরনের অল্পসংখ্যক জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব। এটি সার্বিকভাবে বাংলাদেশে ইপিআই কর্মসূচির ব্যাপক সফলতা।

বিসিজি টিকা (BCG Vaccine)  এটি একটি যক্ষ্মা প্রতিরোধক টিকা। উন্নয়নশীল দেশে যেখানে জীবনযাত্রার মান ও অপুষ্টিজনিত সমস্যা ব্যাপক সেখানে যক্ষ্মা রোগের প্রকটতা বেশি হওয়ায় এসব দেশে ব্যাপকভাবে এ টিকা দেওয়া হয়। যক্ষ্মা রোগ হয় মূলত তীব্র ক্ষতিকর ব্যাসিলাস Mycobacterium tuberculosis দ্বারা। এ রোগের ফলে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু উভয়ই বর্ণনাতীত কষ্ট, অক্ষমতা বা বিভিন্ন কাজে অসমর্থ হয়ে পড়ে। Mycobacterium tuberculosis-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি ব্যাসিলাস (দন্ডাকার ব্যাকটেরিয়া) যা ষাঁড় জাতীয় প্রাণীতে পাওয়া যায়, এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। এ ব্যাসিলাসের নাম ‘ব্যাসিলীয় ক্যালমিটি গিওরিন’ বা বিসিজি। এর নামকরণ হয় এর আবিষ্কারক, ফ্রান্সের বিজ্ঞানী এলবার্ট ক্যালমিটি  ও ক্যামিলি গিওরিনের নামে। বিসিজি টিকায় রয়েছে ক্ষুদ্র জীবিত বিসিজি ব্যাকটেরিয়া। Mycobacterium tuberculosis-এর সঙ্গে বিসিজি-র মিল থাকায় টিকা দেবার পরে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে।

বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগ হবার সম্ভবনা অনেক বেশি, কারণ এখানে রোগ ছড়ানোর যেসব কারণ যেমন দরিদ্রতা, অপুষ্টি, নিম্নমানের জীবনযাপন প্রণালী ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বর্তমান। শিল্পোন্নত বিভিন্ন দেশসহ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ রোগের প্রকটতা বেড়ে চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পুনরায় যক্ষ্মাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্তমানে যক্ষ্মার জরুরি অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছে এবং বিশ্বের অনেক দেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য যক্ষ্মার বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে জাতীয় পর্যায়ে বিসিজি টিকা দেওয়া হচ্ছে যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য। তবে মূলত ব্যাপকভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে ১৯৮৫ সাল থেকে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে ৬টি প্রতিরোধযোগ্য রোগের টিকা দেওয়া হয়। সেগুলি হচ্ছে ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, পোলিও, হাম ও যক্ষ্মা। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী শিশুদের মধ্যে এ ছয়টি রোগের প্রতিরোধ করা। ইপিআই কর্মসূচি শুরু করার পূর্বে সমগ্র বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১% লোককে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়েছে বলে দেখা যায়। কিন্তু ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যেই শতকরা ৯৫ ভাগের  বেশি সফলতা আসে যাকে একটি বড় সাফল্য হিসেবে ধরা যায়।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]

আরও দেখুন জাতীয় টিকা দিবস; সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি