জৈগুনের পুথি
জৈগুনের পুথি মধ্যযুগী দোভাষী পুথিসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য। হানিফা-জৈগুনের যুদ্ধ ও পরিণয় এর বিষয়বস্ত্ত। হুগলি জেলার উদনা গ্রামের অধিবাসী সৈয়দ হামজা ১৭৯৭ সালে কাব্যটি রচনা করেন। কাব্যটি শাহ বারিদ খানের হানিফার দিগ্বিজয় (ষোলো শতক) এবং মুহম্মদ খানের হানিফার লড়াই (১৭২৪) কাব্যের ধারায় রচিত। এখানে এরেমরাজ্যের বাদশাহজাদি জৈগুন বীর্যবতী রমণীরূপে চিত্রিত। তাঁর সঙ্গে দ্বৈতযুদ্ধে প্রথমে হানিফা পরাজিত হলেও শেষ পর্যন্ত তারই জয় হয় এবং জৈগুন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে উভয়ের মধ্যে বাগদান সম্পন্ন হয়। এরপর জৈগুন-হানিফা একত্রে একের পর এক রাজ্য জয় করেন এবং অমুসলিম রাজাদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। হানিফা পিতৃরাজ্য আক্রমণ করে পিতা-পিতৃব্যকেও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। পরিশেষে হানিফা-জৈগুনের শুভ পরিণয়ের মধ্য দিয়ে কাহিনী শেষ হয়।
বস্ত্তত হানিফা-জৈগুনের বীরত্ব প্রদর্শন এবং ইসলামের বিস্তার কাব্যরচনার প্রধান উদ্দেশ্য। এ কাব্যে ইসলাম প্রচারে বাহুবলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং যুগের প্রেক্ষাপটে তা পাঠকের প্রত্যাশাকেই পূরণ করেছে। ব্রিটিশ আমলে পরাজিত শক্তি হিসেবে মুসলিম পাঠক বীর-বীরাঙ্গনা চরিত্রের মধ্যে এক প্রকার মানসিক সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছে। কবির এরূপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রচনায় সাহিত্যের শিল্পসৌকর্য বিকশিত হয়নি।
[ওয়াকিল আহমদ]