জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অ্যাক্ট, ১৯৯৫ (১৯৯৭ সালে সংশোধিত)-এর অধীনে জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গঠিত হয়। দেশের বিচারকার্য পরিচালনায় বিচারিক কর্মকর্তা, সরকারি কৌশুলী, পাবলিক প্রসিকিউটর, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভূক্ত অ্যাডভোকেট, নিম্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি কল্পে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দান এই ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্য। ইনস্টিটিউটের প্রধান থাকেন মহাপরিচালক। সুপ্রিম কোর্টের জজ হিসেবে কর্মরত আছেন বা ছিলেন কিম্বা সুপ্রিম কোর্টের জজ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সরকার ইনস্টিটিউটটির সার্বক্ষণিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মহাপরিচালক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এই ইনস্টিটিউট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব একটি ব্যবস্থাপনা পরিষদের উপর ন্যস্ত। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি পদাধিকার বলে ব্যবস্থাপনা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকেন। বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের দু’জন কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত জজ এবং এ দু’জনের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি হবেন বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান। অন্যান্য সদস্য হলেন বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল; আইন, বিচার ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব; সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব; অর্থ মন্ত্রণালয়ের (অর্থ বিভাগ) সচিব; সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সভাপতি; ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডীন; বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (পিএটিসি) রেক্টর; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার; ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন) ও মহাপরিচালক। ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন) বোর্ডের সচিব হিসেবেও কাজ করেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা ভারপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বোর্ডের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং সে ক্ষমতা বলে তিনি বোর্ডের যেকোন বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন এবং আইনটির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেকোন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারবেন। ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করার এবং তাদের চাকরির শর্তাবলি প্রণয়ন করার বিধান থাকা সত্বেও বর্তমানে বেশিরভাগ কর্মকর্তা বিচার বিভাগীয় অফিসারদের মধ্য থেকে লিয়েনে নিযুক্ত আছেন এবং তারা মহাপরিচালকের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, সরকারের আইন কর্মকর্তা এবং আদালতের সাহায্যকারী স্টাফের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে ইনস্টিটিউটের ট্রেনিং কোর্স প্রণয়ন ও পরিচালিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, বিচার বিভাগের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণ দান করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অ্যাডভোকেটদের এনরোলমেন্টের পূর্বে লীগ্যাল এডুকেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে যেভাবে পৃথক প্রশিক্ষণ দান করে সেরকম কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এখনও পর্যন্ত করে নি। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তালিকাভূক্ত আইনজীবিরা তাদের তালিকাভূক্তির আগে লিগ্যাল এডুকেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ লাভ করে বিধায় জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এখনও পর্যন্ত তাদের পৃথক ট্রেনিংয়ের কোনো ব্যবস্থা করে নি। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারি জজদের মৌলিক ও পদ্ধতিগত আইনের উপর চার থেকে ছয় সপ্তাহের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় যাতে করে তারা বিচারকার্য ও ন্যায়বিচার প্রয়োগের উপযুক্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারে। ১৯৭৯ সালের সহকারি জজ প্রশিক্ষণ ও অবেক্ষাধীন বিধির অধীনে তাদের যে ট্রেনিং দেওয়া হয় এটা তার অতিরিক্ত। প্রশিক্ষণের পরেও পদোন্নতি প্রাপ্ত জজদের নিরবিচ্ছিন্ন শিক্ষা কর্মসূচীর আওতায় নতুন দায়িত্বে ন্যায়বিচার প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের যেসব বিষয়ের মোকাবিলা করতে হয় সে বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দান করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যুগ্ম জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজ কর্তৃক দায়রা মামলা ও আপীলের নিষ্পত্তি। এ ধরণের প্রশিক্ষণ কোর্সের মেয়াদকাল দু’থেকে তিন সপ্তাহ। অধিকন্তু সর্বস্তরে কর্মরত জজদের আইন ও বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তের সর্বশেষ পরিস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত রাখার জন্য এক থেকে দু’ সপ্তাহের স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স চালু আছে। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর সহকারি জজদের বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করার কৌশলের উপর প্রশিক্ষণ দান করা হয়। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দান ছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়ানি মোকদ্দমা পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি উকিল ও ফৌজদারি মোকদ্দমা পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কৌশুলী এবং বেঞ্চ সহকারি, সেরেস্তা সহকারি, রেকর্ড কীপার, স্টেনোগ্রাফার, সেরেস্তাদার এবং নাজিরদের মতো আদালতের সাহায্যকারী স্টাফদের বিচারকার্যে মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মামলা পরিচালনা অথবা মামলার ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দান করা হয়। জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট কম্পিউটার সাক্ষরতা সহ তথ্যপ্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। বিচার বিভগীয় অফিসাররা আদালত পরিচালনাকারী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে যেসব মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন সেগুলির নথিপত্র মূল্যায়ন করার পর রায় ও আদেশ লেখার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ত্রিশজন প্রশিক্ষণার্থীকে এক একটি গ্রুপে প্রশিক্ষণ দান করা হয়। অদ্যাবধি ২৯৭ জন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারি জজ, ২৩৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, ১৭৯০ জন সার্ভিস জজ, ৩১৫ জন সরকারি ল’ অফিসার এবং ৫১১ জন কোর্ট সাপোর্ট স্টাফকে প্রশিক্ষণ দান করা হয়েছে।
[কাজী এবাদুল হক]