জিমনাস্টিকস
জিমনাস্টিকস সুষ্ঠুভাবে শরীর গঠনের জন্য বিশেষ ধরনের ব্যায়াম বা শরীরচর্চা। প্রাচীন গ্রিসে অলিম্পিক ক্রীড়ায় যোগদানেচ্ছু ক্রীড়াবিদদের শিক্ষাক্ষেত্র রূপে জিমনাসিয়াম (Gymnasium) গড়ে ওঠে। বহু শতাব্দী পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত প্রাচীন চীন, ভারত, পারস্য, গ্রিক ও রোম সভ্যতার ঐতিহাসিক শারীরিক সংস্কৃতির ধারা অর্থাৎ অ্যাক্রবেটিকস ও নৃত্যকলা ছিল আজকের ক্রীড়া জিমনাস্টিক মুভমেন্টের বিভিন্ন অংশের অনুরূপ। অতীতে আনন্দ উৎসব ও অতিথি মনোরঞ্জনের উপায় হিসেবে টাম্বলিং মুভমেন্ট ব্যবহূত হতো।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে লুদভিগ ইয়ান কর্তৃক বার্লিনে তুর্নগ্লাটসে নামক স্থানে কয়েকটি জিমনাসিয়াম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আধুনিক জিমনাস্টিকস চর্চার সূত্রপাত হয়। অবাধ শারীরিক কসরত (free calisthenics) ছাড়াও আধুনিক জিমনাস্টিক কর্মতৎপরতার মধ্যে রয়েছে সাইড ও লং হর্স, প্যারালাল ও হরাইজেন্টাল বার, ট্রামপোলিন, রোপ ক্লাইম্বিং, ফ্লাইং রিংস ও টাম্বলিং।
১৮৮১ সালে আন্তর্জাতিক জিমনাস্টিকস ফেডারেশন (FIG)-এর টেকনিক্যাল কমিটি আইনকানুন সম্বলিত ১২ পাতার বই Code of Point নামে প্রকাশ করে এবং সেই অনুযায়ী ১৯৫০ সালের প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তখন থেকেই ঐচ্ছিক ব্যায়ামের বস্ত্তনিষ্ঠ মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে তিনটি বিষয় (Difficulty, Combination, Execution) বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশে জিমনাস্টিকসের সূচনা দীর্ঘদিনের না হলেও ক্রমেই এর প্রসার বেড়ে চলেছে। ১৯৭২ সালে এম.এ জলিলকে আহবায়ক করে বাংলাদেশ জিমনাস্টিকস ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৩ সালে এটি সরকারি স্বীকৃতি পায়। জাতীয় পর্যায়ে জিমনাস্টিকস প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে। ১৯৭৪ সালে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ে মহিলা জিমনাস্টিকস প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ জিমনাস্টিকস ফেডারেশন প্রতিবছর এ দুই টুর্নামেন্টের পাশাপাশি ১৯৭৪ সাল থেকে আয়োজন করে আসছে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস জিমনাস্টিকস প্রতিযোগিতা। এছাড়া ১৯৮০ সাল থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন প্রতিযোগিতা ও জুনিয়র জিমনাস্টিকস প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ জিমনাস্টিকসের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও অংশগ্রহণ করে থাকে। ১৯৭৮ সালে কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ এবং ১৯৮৮ সালে ইরানের জাতীয় শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত জিমনাস্টিকস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৮ সালে এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত সার্ক দেশসমূহের জিমনাস্টিকস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের দুইজন খেলোয়াড় ব্যক্তিগতভাবে দুটি ব্রোঞ্জ পান এবং দলগতভাবেও বাংলাদেশ ব্রোঞ্জ জেতে।
বাংলাদেশ জিমনাস্টিকসের প্রায় সবগুলি ইভেন্টই খেলে। এর মধ্যে রয়েছে পুরুষদের ৬টি, যেমন ফ্লোর, প্যারালাল বারস, হরাইজেন্টাল বার, রোমান রিংস, পমেল হর্স, লং হর্স ও মহিলাদের ৪টি, যেমন ফ্লোর, আন ইভেন বারস, ব্যালেন্স বিম, সাইড বারস। জিমনাস্টিকস চর্চায় স্থানীয় পর্যায়ে ক্লাব ও সংস্থাসমূহের মধ্যে রয়েছে বিমান এয়ারলাইন্স, সেন্ট মার্গারেট টিউটোরিয়াল স্কুল, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, জিমনাস্টিকস কৌশলী, ঢাকা প্রেসিডেন্সি কলেজ, সিসিলি ক্লাব, ইয়ংম্যান্স ফকিরাপুল ক্লাব, যাত্রাবাড়ী ক্রীড়াচক্র, প্রগতি বয়েজ ক্লাব, বিটিএমসি, আনসার ও ভিডিপি, বিকেএসপি প্রভৃতি।
[গোফরান ফারুকী]