জামেরী, কাদের
জামেরী', 'কাদের (১৯১০-১৯৮৩) রাগসঙ্গীত শিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। কলকাতার শান্তিভাঙ্গা পাড়ায় এক সঙ্গীত শিল্পী পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা গোলাম জানে খান ছিলেন প্রখ্যাত তবলাবাদক। ঠুমরির রাজা পিতৃব্য জমিরুদ্দিন খাঁ কাদের জামেরীর সঙ্গীতগুরু। শৈশবে পিতৃবিয়োগের পর জমিরুদ্দিন খাঁ এবং রাগসঙ্গীতের অন্যতম দিকপাল বাদল খাঁর তত্ত্বাবধানে কাদের জামেরীর সঙ্গীতজীবন শুরু হয় এবং অতি অল্প বয়সেই তিনি রাগসঙ্গীতে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেন।
১৯৩০ সালে কলকাতার এক মঞ্চে শিল্পী হিসেবে কাদের জামেরীর প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে। শুরু থেকেই তিনি সঙ্গীত জগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কলকাতার সঙ্গীত মহলে তাঁর এ পরিচিতি এবং সাঙ্গীতিক প্রতিভার কারণে মাত্র ২১ বছর বয়সে ১৯৩১ সালে তিনি এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানিতে সহযোগী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। এইচএমভি-তে যোগদানের ফলে ভবিষ্যতে তাঁর গান রেকর্ড করা এবং সুরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ সহজতর হয়।
১৯৩৩ সালে কাদের জামেরী একটি হিন্দি গানের সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং পরবর্তীকালে তোমার আমার ও ভুলে নাগ্মে নামে দুটি ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে নিয়মিত ভজন, গীত, খেয়াল ও ঠুংরি পরিবেশন করে তিনি সকলের প্রশংসা অর্জন করেন। পরে এর সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানিতে তিনি নিজের সুরারোপিত বহু গান রেকর্ড করেন। এ ছাড়া কলম্বিয়া গ্রামোফোন কোম্পানিতেও তিনি একজন সঙ্গীত প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫১ সালের ১ এপ্রিল তিনি ‘নিজস্ব শিল্পী’ হিসেবে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে যোগদান করেন এবং ১৯৬৯ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এ সময় ঢাকায় তাঁর একটি শিষ্যমন্ডল গড়ে ওঠে, যাঁদের তিনি নিজস্ব ধারায় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিক্ষা দেন।
কাদের জামেরী প্রথম জীবনে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও শেষজীবনে সুরকার হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর সুরে গান করে অনেক প্রখ্যাত শিল্পী বিপুল সুনাম অর্জন করেন। বাংলা সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮০ সালে ‘সংকেত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’ তাঁকে ‘সংকেত পদক’-এ ভূষিত করে। [মোবারক হোসেন খান]