জানাজা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:০২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

জানাজা  আরবি শব্দ, অর্থ খাট বা খাটিয়া, খাটিয়ার উপর রক্ষিত লাশ, দাফন কাফনের শেষকৃত্য। ইসলাম ধর্মে মৃতদেহ দাফন বা কবরস্থ করার অনুষ্ঠানের গুরুত্ব রয়েছে।

আল-কুরআনে দাফন-কাফন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ কোনো কথা বলা হয়নি। কিন্তু হাদিসের ওপর ভিত্তি করে রচিত ফিকহ্ গ্রন্থসমূহে এর বিস্তারিত বিবরণ আছে। কোনো মুসলিমানের মৃত্যু হলে তাকে খাটিয়ার উপর কিবলামুখী করে শুইয়ে গোসল করানো হয়। এ গোসলে কোনো নিয়্যাতের প্রয়োজন হয় না। মুর্দার প্রতিটি অঙ্গ বেজোড় সংখ্যায় তিন বা পাঁচবার ধোয়া হয়। তারপর লাশকে কাফন পরানো হয়। কাফনের কাপড় হাদিস শরিফ অনুযায়ী এক, দুই বা তিন খন্ড হতে পারে। ফিকহ্ শাস্ত্রে পুরুষদের জন্য তিন খন্ড এবং মহিলাদের জন্য পাঁচ খন্ড কাফনের কাপড় বিহিত হয়েছে। তবে পুরুষদেরও পাঁচ খন্ডে আবৃত করা যায়।

কাফনের কাপড় সাধারণত সাদা রঙের হয়। ইহরাম অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে ইহরামে পরিধেয় বস্ত্রের বিধান অনুসারে তাঁর কাফনে সেলাই থাকবে না এবং মাথা ঢাকা হবে না। কাফন পরানোর পর মসজিদের জানাজার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গনে কিংবা খোলা মাঠে রুকু ও সিজদা ছাড়াই জানাজার সালাত আদায় করা হয়। জানাজার নামাযে প্রধানত মৃতব্যক্তির জন্য দোয়ার ব্যবস্থা থাকে।

শহীদকে দাফন করার আগে গোসল করানো হয় না, কারণ তাতে শাহাদাতের সাক্ষ্য বহনকারী রক্ত ধুয়ে মুছে যায়। বিনা প্রয়োজনে মৃতদেহের নিকট আলো জ্বালিয়ে রাখা নিষেধ। এসব কাজ সম্পন্ন করার পর কবরস্থানের দিকে জানাজার খাটিয়া নিয়ে যাত্রা করা হয়। পুরুষ ও স্ত্রীলোক উভয়ের লাশের খাটিয়া পুরুষরাই বহন করে। মহিলাদের লাশ সাধারণের দৃষ্টি থেকে ঢেকে রাখা হয়।  লাশের সঙ্গে কবরস্থানে যাওয়া মুস্তাহাব বলে বিবেচিত।

দাফনের কাজ বেজোড়সংখ্যক লোকেরা সম্পন্ন করে। মৃতের লাশ কিবলামুখী করে কবরে শোয়ানো হয়। উপস্থিত লোকেরা সকলেই তিনমুঠি করে মাটি কবরের উপর নিক্ষেপ করে। এ উপলক্ষে মৃতের কানে কলেমা তাইয়্যেবা শোনানো হয়; এর উদ্দেশ্য কবরের মধ্যে মুনকার ও নকির যখন প্রশ্ন করবে তখন সে যাতে সঠিক উত্তর দিতে পারে। কখনও কখনও সূরা ফাতিহা এবং মু‘আওবিযাতান (কুরআনের শেষ দুটি সূরা) পাঠ করা হয়। দাফনের সময় মহিলাদের কবর চাদর দিয়ে ঢেকে নেওয়া হয়।

ফিকহে্র বিধান অনুযায়ী কবরকে অলঙ্কৃত করা, এমনকি কবরের উপর শিলালিপি স্থাপন করাও অনুমোদিত নয়। কেবল  মৃতের মস্তক বরাবর একটি পাথর বা কাষ্ঠখন্ড দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বহু  মাযার ও সমাধিসৌধে বিচিত্র কারুকার্য দেখা যায়।

কবর জিয়ারত করা প্রথমে নিষিদ্ধ করা হলেও পরবর্তী পর্যায়ে তা অনুমোদিত হয়। লাশ দাফন করার পূর্বে ও পরে সমবেদনা জ্ঞাপন নিমিত্ত মরহূমের পরিবার-পরিজনের গৃহে গমন করার বিধান ইসলামে রয়েছে। দাফনের পর গরিব-মিসকিনদের ভোজ দেওয়ার সুপারিশও ফিকহ কিতাবে পাওয়া যায়। এ সময় কুরআন তেলাওয়াত করে তাঁর সুওয়াব মরহূমের রুহের প্রতি পৌঁছানোর জন্য দোয়া করা হয়ে থাকে।  [সৈয়দ আশরাফ আলী]