জয়দেব

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৫৬, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

জয়দেব (বার’শ শতক)  সংস্কৃত কবি। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার অজয়নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেঁদুলি গ্রামে তাঁর জন্ম। কেউ কেউ তাঁকে মিথিলা বা উড়িষ্যার অধিবাসী বলেও মনে করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ভোজদেব, মাতা বামাদেবী এবং  স্ত্রী পদ্মাবতী।

জয়দেব ছিলেন লক্ষ্মণসেনের (১১১৯?-১২০৫?) রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম; অপর চারজন হলেন  গোবর্ধন আচার্যশরণধোয়ী ও  উমাপতিধর। কারও কারও মতে তিনি কিছুকাল উৎকলরাজেরও সভাপন্ডিত ছিলেন।

জয়দেবের বিখ্যাত রচনা গীতগোবিন্দম্। এটি একটি  সংস্কৃত গীতিকাব্য। রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা এর মুখ্য বিষয়। ২৮৬টি শ্লোক এবং ২৪টি গীতের সমন্বয়ে ১২ সর্গে এটি রচিত। বর্ণিত বিষয়ের তত্ত্বনির্দেশক বারোটি ভিন্ন ভিন্ন নামে সর্গগুলির নামকরণ করা হয়েছে, যথা: সামোদ-দামোদর, অক্লেশ-কেশব, মুগ্ধ-মধুসূদন, স্নিগ্ধ-মধুসূদন, সাকাঙ্ক্ষ-পুন্ডরীকাক্ষ, ধৃষ্ট-বৈকুণ্ঠ, নাগর-নারায়ণ, বিলক্ষ-লক্ষ্মীপতি, মুগ্ধ-মুকুন্দ, মুগ্ধ-মাধব, সানন্দ-গোবিন্দ এবং সুপ্রীত-পীতাম্বর। কাব্যের নায়ক-নায়িকা রাধা-কৃষ্ণ হলেও তাঁদের প্রতীকে জীবাত্মা-পরমাত্মার সম্পর্ক এবং নর-নারীর চিরন্তন প্রেমই এর মূল বক্তব্য। রাগমূলক গীতসমূহ এ কাব্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। পরবর্তীকালের বাংলা পদাবলি সাহিত্যে এর গভীর প্রভাব পড়েছে। বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও সাহিত্য-রসিকদের নিকট গীতগোবিন্দম্ এক সময় পরম শ্রদ্ধার বিষয় ছিল। পুরীর  জগন্নাথ মন্দিরে এটি এখনও নিত্য পঠিত হয়। ভারত ও ভারতের বাইরেও গ্রন্থটি বেশ জনপ্রিয় এবং ইংরেজিসহ ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে। গীতগোবিন্দম্-এর ওপর প্রায় অর্ধশত টীকাগ্রন্থ রচিত হয়েছে।

গীতগোবিন্দম্-এর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এতে চরণশেষে অন্তমিল অনুসৃত হয়েছে, যা সংস্কৃত সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রায়শই দুর্লভ। এর ভাষা সহজ-সরল এবং প্রায় বাংলার কাছাকাছি। সংস্কৃত ও বাংলার যুগসন্ধিক্ষণে রচিত বলে গ্রন্থটির ভাষা এরূপ সহজ ও বাংলার অনুগামী হয়েছে।

শ্রীধরদাসের কোষকাব্য সদুক্তিকর্ণামৃতে (১২০৬) গীতগোবিন্দম্-এর ৫টি শ্লোক ব্যতীত জয়দেবের নামাঙ্কিত আরও ২৬টি শ্লোক পাওয়া যায়। শিখদের ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেবে (ষোল’শ শতক) জয়দেবের দুটি শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে। নাভাজি দাসের ভক্তমাল, হলায়ুধ মিশ্রের  সেখশুভোদয়া প্রভৃতি গ্রন্থে এবং প্রচলিত জনশ্রুতিতে জয়দেব ও পদ্মাবতী সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। বৈষ্ণব সহজিয়াগণ জয়দেবকে আদিগুরু এবং নবরসিকের অন্যতম বলে মর্যাদা দিয়ে থাকেন। বীরভূমের কেন্দুবিল্বতে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে জয়দেব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যা ‘জয়দেব মেলা’ নামে পরিচিত। এ মেলায় এখন বাউলদের সমাবেশ এবং বাউল আখড়াসমূহ বিশেষ আকর্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে।  [পরেশচন্দ্র মন্ডল]