গৌড়পাদ
গৌড়পাদ (আনু. ৮ শতক) সংস্কৃত পন্ডিত, দার্শনিক ও প্রাচীন অদ্বৈতসম্প্রদায়ের প্রসিদ্ধ আচার্য। তিনি ভারতখ্যাত বৈদান্তিক আদি শঙ্করাচার্যের গুরু ছিলেন। গৌড়পাদের বাঙালিত্ব নিয়ে সংশয় থাকলেও একাধিক মতে, তিনি বাঙালি হিসেবেই উল্লিখিত হয়েছেন। আরবীয় ভারততত্ত্ববিদ আল-বিরুণী যে গৌড় সন্ন্যাসীর কথা বলেছেন তিনি আর এ গৌড়পাদ একই ব্যক্তি বলে পন্ডিতদের ধারণা। গৌড়ের অধিবাসী বলেই হয়ত তাঁকে গৌড় সন্ন্যাসী বলে অভিহিত করা হয়েছে। সুরেশ্বরাচার্যের সাক্ষ্য অনুযায়ী গৌড়পাদের জন্ম বঙ্গদেশে। গৌড়পাদ নিজে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ গৌড়পাদকারিকায় (আনু. ৭৮০) নিজেকে ‘গৌড়াচার্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
গৌড়পাদকারিকা বেদান্তদর্শনের একখানা প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। এতে মান্ডূক্যোপনিষদের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গ্রন্থটি ২১৫টি শ্লোক এবং চারটি ভাগে বিভক্ত। ভাগগুলিতে যথাক্রমে আগম, বৈতথ্য, অদ্বৈত এবং অলাতশান্তি আলোচিত হয়েছে। এতে শঙ্করের পূর্ববর্তী বেদান্তমত এবং বৌদ্ধ মাধ্যমিক শূন্যবাদের মিশ্রণ দেখা যায়। পরবর্তীকালে শঙ্করাচার্য ব্রহ্মসূত্রের স্বীয় শঙ্করভাষ্যে (১/৪/১৪) গৌড়পাদের শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন। গৌড়পাদ রচিত আরও দুটি গ্রন্থ হলো ঈশ্বরকৃষ্ণের সাংখ্যকারিকার টীকা এবং উত্তরগীতা।
গৌড়পাদের পূর্বে বাঙালি কর্তৃক বেদান্তচর্চার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। শঙ্করাচার্যের গুরু হওয়ার সুবাদে গৌড়পাদ বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন নিঃসন্দেহে।
[সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]