গঙ্গোপাধ্যায়, যামিনী প্রকাশ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:১২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

গঙ্গোপাধ্যায়, যামিনী প্রকাশ (মৃত্যু ১৯৫৩)  চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নে। যামিনীপ্রকাশ প্রথম জীবনে ব্রটিশ চিত্রকর সি.এল পামারের ছাত্র ছিলেন। পরে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বিখ্যাত শিল্পী পুলিন কুন্ডুর সংস্পর্শে আসেন এবং তাঁর সহযোগী হিসেবে পাশ্চাত্য রীতি পুরোপুরি রপ্ত করেন।

১৯১৬ সালে শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল থেকে বিদায় নেওয়ার পর যামিনীপ্রকাশ সেখানকার উপাধ্যক্ষের পদে নিয়োগ লাভ করেন। ওই আর্ট স্কুলের অধ্যক্ষ পার্সি ব্রাউন যখনই তেল রং চিত্রের ফরমায়েশ পেতেন, তখনই তিনি সেগুলি এ মাধ্যমে পারদর্শী যামিনীপ্রকাশের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। যামিনীপ্রকাশ জলরঙে খুব কমই কাজ করেছেন। কিন্তু ওই শৈলীতেও পারদর্শীতার কারণে তিনি অনুশীলনকারী ছাত্রদের নির্দেশ দিতেন এবং তেল চিত্রে অনুশীলনকারী ছাত্রদের কাজ মনোযোগসহকারে সংশোধন করে দিতেন। প্রতিকৃতি চিত্রাংকনে তিনি পারদর্শী ছিলেন এবং গিরিমাটি মেটে সিঁদুর ও তামাটে সবুজ রং দিয়ে তিনি তাঁর অধিকাংশ কাজ করতেন। তিনি নিসর্গ চিত্রের জন্য হলুদাভ, আকাশী, লালচে ও প্রুশিয়ান নীল রং ব্যবহার করতেন। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর নিজের তৈরী আকর রং ব্যবহার করতেন এবং তাঁর ছাত্রদের বাজারে তৈরী মেকী (artificial) রং ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করতেন।

জমিদার রমনী


শিল্পি- যামিনী প্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

যামিনী প্রকাশের চিত্রে প্রশান্তির ভাব লক্ষণীয়। তিনি তাঁর সমসাময়িক ভারতীয় শিল্পীদের ন্যায় ভারতীয় পুরাণ ও ধর্মীয় কাহিনী তাঁর ছবির বিষয় হিসেবে বেছে নেন। এছাড়াও তিনি প্রতিকৃতি ও দৃশ্যচিত্র অংকন করতেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য চিত্রের মধ্যে ‘রাজা শূদ্রকের সভায় শুক-শারী’, ‘বুদ্ধের গৃহ ত্যাগ’, ‘শ্রীকৃষ্ণের যুগল রূপ’, ‘শরবর্ণে কার্তিক’, ‘পূজারিণী’, ‘বিরহী যক্ষ’, ‘সান্ধ্য আরাধনা’। তাঁর কিছু বিখ্যাত চিত্র যেমন- ‘দিনমজুর’, ‘পূজারিণী’, ‘সান্ধ্য আরাধনা’ সাহিত্য ও প্রবাসী পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। তাঁর শিল্পী জীবনের শেষ দিকে তিনি দেশি মোটা চটের উপর মোটা রঙের প্রলেপ দিয়ে ‘উল্কা’ নামে একটি চিত্র অংকন করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন।

প্রতিকৃতি ও দৃশ্যচিত্র নির্মাণে শিল্পী যামিনীপ্রকাশ ছিলেন উনিশ শতকের প্রথমদিককার অপ্রতিদ্বন্দ্বী চিত্রকর। তিনি হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার বহু চিত্র অংকন করেছেন। এছাড়া নদী-মোহনায় ভাসমান জেলে-ডিঙ্গি ও বাণিজ্য তরীর পাল তোলা বহরেরও চিত্র অংকন করেছেন। তাঁর প্রতিটি চিত্র নব নব কম্পোজিশন, রঙের মাধুর্য ও রহস্যময়তায় ভরপুর। তাঁর এ ধরনের চিত্রে ইউরোপীয় ইম্প্রেসনিস্টদের (Impressionist) ন্যায় রঙের ওপর আলোর কম্পন লক্ষণীয়।

চিত্রশিল্পী হিসেবে যামিনীপ্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায়-এর খ্যাতি এত বেশি ছিল যে, ঊনিশ শতকের প্রথম ও মধ্যভাগে ভারতের বহু রাজপরিবার ও জমিদার আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে তাঁর চিত্র বহু মূল্য দিয়ে ক্রয় করতেন। যামিনী প্রকাশের ছাত্রদের মধ্যে খ্যাতিমান ও উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন  যামিনী রায়অতুল বসু, বসন্ত গাঙ্গুলী প্রমুখ। [নাজমা খান মজলিস]