খান, মতীয়র রহমান

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:০৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

খান, মতীয়র রহমান (১৮৭২-১৯৩৭)  সাহিত্যিক। ১৮৭২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের পারিল গ্রামে জন্ম্র গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মফিজ উদ্দিন খান, চট্টগ্রামে একজন মুনসেফ ছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে মতীয়র রহমান খান পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তাঁর পিতৃব্য তৎকালীন নারায়ণগঞ্জের সাবরেজিস্ট্রার ওয়াকীলউদ্দীন সাহেব তাঁকে লালনপালনের দায়িত্ব গ্রহন করেন। তাঁর দাদা নাদের আলী খান ছিলেন চট্টগ্রামের একজন সরকারী সেরেস্তাদার।

মতীয়র রহমান খান কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। বিখ্যাত আব্দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন তাঁর সহপাঠী। কথিত আছে আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী ইংরেজিতে কবিতা লিখতেন, আর মতীয়র রহমান খান তা বাংলায় অনুবাদ করতেন। অতি অল্পবয়স হতেই তাঁর মধ্যে কবিত্ব শক্তির বিকাশ ঘটে। পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালেই তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তিনি ‘আশা’ শিরোনামে দীর্ঘ এক কবিতা লেখেন। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তিনি ‘ধৃতরাষ্ট্রের বিলাপ’ শীর্ষক এক দীর্ঘ কবিতা রচনা করেন।

বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই তিনি দিনাজপুরের শিবগঞ্জের মধ্য-ইংরেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরূপে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কলকাতা লায়েক জুবিলী স্কুলে ও কলকাতা মাদ্রাসায় কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। এসময় তিনি ‘আমিনা’ নামক একখানি ক্ষুদ্র সামাজিক উপন্যাস লেখেন।

মতীয়র রহমান খান


পরে দিল্লী গিয়ে ‘মোখলেসিয়া একাডেমি’ স্কুলে অঙ্ক ও ইতিহাসের শিক্ষক পদে যোগদান করেন। ১৯০৬-১৯০৭ সালে জরিপ বিভাগে কানুনগো পদে চাকুরি করেন। খাসমহল অফিসার হিসেবে অবসর গ্রহণের পরও তিনি প্রায় দুই বৎসর মহারাজা প্রদ্যোৎকুমার ঠাকুরের জমিদারী কাচারীতে কাজ করেন। পরে তিনি Royal Calcutta Golf Club-এর Land Superintendent পদে আনুমানিক দুই বৎসর কাজ করেন। মতীয়র রহমান খান অনেক সরকার অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।

১৯৩৫ সালের ১৮ মার্চ হানাফী পত্রিকায় ‘সম্রাট নাসিরউদ্দিন’ শীর্ষক একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে ‘নিখিল বঙ্গ কানুনগো‘ সংস্থার বার্ষিক অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯২৮ সালের ২৭ আগস্ট সাপ্তাহিক মোহাম্মদী (ফাতেহা-ই-দোয়াজদহম, সংখ্যা)-তে ‘ফারাণে হাজেরা দেবী’ শীর্ষক তাঁর একটি দীর্ঘ কবিতা প্রকাশিত হয়।

তিনি নীতিগর্ভ রচনার পাশাপাশি বিদ্রুপাত্মক সাহিত্য রচনায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ১৯০৩ সালে ‘শ্রীদোদেলা, ‘শ্রীশ্রী দু’কানকাটা’, ‘উচিত বক্তা’ প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি বহু বিদ্রুপাত্মক কবিতা রচনা করেন। তিনি বিখ্যাত ইংরেজ কবি Sir Walter Scott-এর Love of Country কবিতার মূলভাব অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলা অনুবাদ করেন। মতীউর রহমান ছিলেন ক্লাসিক্যাল লেখকদের অন্যতম। তৎকালে বঙ্গবাসী পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ ‘সাহিত্যসমাচার’-এ তাঁর ‘পীর শাহ শাহী’ শীর্ষক ঐতিহাসিক আলেখ্যর প্রশংসাব্যঞ্জক সমালোচনা হয়। এতে লেখকের বর্ণনাকুশলতা ও ভাষার ওপর দখল দুই-ই প্রতিভাত হয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: কবিতা- এজিদ বধ (মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত), এমাম বধ, উপন্যাস-যমুনা, নব-কুমুদ, মোক্ষপ্রাপ্তি; ভ্রমণ কাহিনী-প্রবাসের স্মৃতি, আগ্রা কাহিনী; ব্যঙ্গাত্মক রচনা-মহাপ্রভু, গূঢ়তত্ত্ব, গুপ্তসভা। তাঁর প্রবাসের স্মৃতি গ্রন্থটিতে তাজমহল হতে শুরু করে আগ্রাদূর্গ, দেওয়ান-ই খাস, দেওয়ান-ই-আম, শীশমহল, নাগিনা মসজিদ, যোধাবাই মহল, জামে মসজিদ, মতি মসজিদ, আরাম বাগ, সেকেন্দ্রা ও ফতেপুর সিক্রির মর্মস্পর্শী বর্ণনা আছে। তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের উপন্যাসের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ যমুনা উপন্যাসটি রচনা করেন। ১৯৩৭ সালের ২৯ জুলাই ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [মাহফুজা খানম]