খাড়িয়া

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:০১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

খাড়িয়া  বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। খাড়িয়া ও মুন্ডা একই নৃগোষ্ঠী। খাড়িয়াদের আদি নিবাস ভারতের ছোট নাগপুর, রোহতাসগড় এবং অযোধ্যার পাহাড়ী অঞ্চল। বৃটিশ শাসনামলে খাড়িয়ারা চা-শ্রমিক হিসাবে সিলেট জেলায় আসে। ধীরে ধীরে এদেশে তারা স্থায়ী বসত গড়ে তোলে। খাড়িয়াদের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার এবং তাদের অধিকাংশই মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানাধীন বিভিন্ন চা বাগানে চা-শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত।

খাড়িয়া সমাজ ৪টি ভাগে বিভক্ত। সেগুলি হচ্ছে দুধ-খাড়িয়া, ঢেলকী-খাড়িয়া, এড়েঙ্গা-খাড়িয়া এবং মুন্ডা-খাড়িয়া। এ ছাড়া খাড়িয়া সমাজে বেশ কয়েকটি অসবর্ণ গোত্র রয়েছে। গোত্রগুলি হচ্ছে ইন্দোয়ার, বাঘোয়ার, বিলুঙ্গা, ডালমাড়িয়া, ধানোয়ার, ডুংডুং, কেরকেট্টা, কেশোয়ার, খাটখাড়িয়া, সুরুজপুড়িয়া, হেঁঠেটু, টপোরিয়া, ধুরবুঙ্গিয়া ইত্যাদি। খাড়িয়া সমাজ পিতৃপ্রধান এবং পুত্র সন্তান পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। খাড়িয়া মহিলারা স্বাবলম্বী। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য খাড়িয়া সমাজের রয়েছে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। পঞ্চায়েত প্রধানকে তারা পাহান বা ডেহুরী নামে অভিহিত করে। বাংলা খাড়িয়াদের প্রধান ভাষা। বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণসহ অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর সাথে তারা বাংলাভাষা ব্যবহার করে। তবে তারা নিজেদের মধ্যে মুন্ডাদের সাদরী ভাষায় কথা বলে থাকে। বর্তমানে খাড়িয়া সমাজে শিক্ষিতের হার শতকরা দশজনের মতো।

খাড়িয়ারা আমিষভোজী। ভাত ও রুটি তাদের প্রধান খাদ্য। শাকসবজি, মাছ-মাংস, ডিম, ডাল প্রভৃতি তারা আহার করে। মহিষ ও গোমাংস তারা আহার করেনা। মৌসুমী ফলমূল এবং বন্য আলুও তাদের খাবারের তালিকায় রয়েছে। দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্যসামগ্রীও তাদের বিশেষ পছন্দ। চা, বিড়ি, সিগারেট, পানসুপারি, মদ (হাঁড়িয়া) প্রভৃতি খাড়িয়াদের নিকট খুব প্রিয়।

খাড়িয়ারা সনাতন হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী, তবে তারা তাদের নিজস্ব সনাতন ধর্মের আচারঅনুষ্ঠানও পালন করে। তাদের উপাস্য দেবদেবীর মধ্যে দুর্গা, সরস্বতী, কালী এবং শীতলাদেবী অন্যতম। নিজেদের আদিধর্মে দেবদেবীকেও তারা আরাধনা করে থাকে। এগুলির মধ্যে বনদেবতা, বুড়াবুড়ি, দুরাধুলু, রক্ষাধুলু ও ধরম দেওতা অন্যতম। কিছুসংখ্যক খাড়িয়া বর্তমানে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছে।

স্বগোত্রে বিবাহবন্ধন খাড়িয়া সমাজে নিষিদ্ধ। সাধারণত ছেলের বয়স কুড়ি এবং মেয়ের বয়স ঘোল বছর হলে তাকে বিয়ের উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। খাড়িয়া সমাজে একবিবাহ রীতি প্রচলিত এবং সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ ও বিধবা বিবাহের প্রথাও বিদ্যমান। বিবাহিতা খাড়িয়া মহিলারা সিঁথিতে সিঁদুর এবং হাতে লোহার বালা ব্যবহার করে। বর ও কনের স্থায়ী নিবাস হয় বরের পিতৃগৃহে। বিবাহে কন্যাপণ এবং যৌতুক নগদ অর্থে কিংবা দ্রব্যে পরিশোধ করা হয়। বিবাহ বরের পিতৃগৃহেই অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের আগের দিন কনে তার আত্মীয়স্বজনসহ বিকেলে বরের পিতৃগৃহে আগমন করে। বরের পিতা বিয়ের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ভোজের ব্যবস্থা করা হয়।

খাড়িয়ারা মৃতদেহ সমাহিত করে। মৃতদেহ উত্তমরূপে স্নান করানো হয় এবং নতুন সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে কবরে সমাহিত করা হয়। সামর্থ্য থাকলে কাঠের কফিনেও মৃতদেহ সমাহিত করা হয়। সমাহিত করার পর শবযাত্রীরা মৃত্যব্যক্তির বাড়িতে একত্রে ফিরে আসে এবং নিকটস্থ কোনো জলাশয়ে স্নান শেষে মৃত ব্যক্তির ঘরের বারান্দায় প্রজ্জ্বলিত আগুনে ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস নেয়। এতে তারা মনে করে তাদের শুচিকরণ সম্পন্ন হলো। মৃতব্যক্তির নিকটআত্মীয়েরা দশ দিন অশৌচকাল পালন শেষে পাড়াপ্রতিবেশি সবাইকে ভোজে আপ্যায়িত করে।  [সুভাষ জেংচাম]