শাহ সুজা মসজিদ২
শাহ সুজা মসজিদ২ চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন ওয়ালিপুর গ্রামে ওয়ালিপুর আলমগীরী মসজিদের সামান্য উত্তরে অবস্থিত। ভবনটির আদি বৈশিষ্ট্যের অনেককিছুই এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। তারপরও অতীতের গুরুত্বপূর্ণ নির্দশন হিসেবে এখনও বেশকিছু চিহ্ন বিদ্যমান।
সম্পূর্ণ ইট নির্মিত মসজিদটি আয়তাকার (বাইরের দিক থেকে এটি ১৪.০২ মিটার × ৬.৮৬ মিটার) এবং বাইরের চার কোণে রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকার পার্শ্ববুরুজ, যেগুলির ভিত্তিমূল এখনও ধ্বংসস্তূপে বিদ্যমান। মসজিদে পাঁচটি প্রবেশপথ রয়েছে, তিনটি পূর্বদিকে এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে। পূর্ব পার্শ্বের সবগুলি প্রবেশপথই অর্ধ-গম্বুজ ভল্টের নিচে উন্মুক্ত। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি পার্শ্ববর্তী দুটি অপেক্ষা বড় এবং বাইরের দিকে অভিক্ষিপ্ত। কিবলা দেওয়ালে প্রবেশপথের অক্ষ বরাবর রয়েছে তিনটি মিহরাব। অর্ধ-অষ্টভুজাকার কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এবং পেছনের দিকে প্রক্ষিপ্ত। পার্শ্ববর্তী মিহরাব কুলুঙ্গিগুলি আয়তাকার।
- কেন্দ্রীয় প্রবেশপথ ও মিহরাবটির অভিক্ষিপ্ত ছোট মিনারগুলি (turrets) বিলীন হয়ে গেছে। মসজিদ অভ্যন্তর দুটি প্রশস্ত খিলান দ্বারা তিন ভাগে বিভক্ত। মাঝের অংশটি বর্গাকার এবং পার্শ্ববর্তী আয়তাকার অংশদুটি অপেক্ষা বড়। এগুলি অষ্টভুজাকার ড্রামের উপর স্থাপিত গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। মাঝের গম্বুজটি পাশের দুটি গম্বুজ অপেক্ষা বড়। পদ্মচূড়া সম্বলিত সবগুলি গম্বুজেরই নির্মাণ কৌশলে ঢাকার ইসলাম খান মসজিদের (১৬৩৫-৩৯) গম্বুজ নির্মাণের পদ্ধতি লক্ষণীয়।
মসজিদটি অত্যন্ত করুণভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা সম্প্রতি এটি সংস্কার করেছেন। সমগ্র মসজিদটি এখন অলঙ্করণহীন। তবে পূর্ব ফাসাদের প্যানেলে এবং প্রতিটি গম্বুজের অভ্যন্তর শীর্ষে তিন স্তর বিশিষ্ট রোজেট নকশার চিহ্ন প্রতীয়মান হয়।
মসজিদের শিলালিপিটি বর্তমানে নিখোঁজ। স্থানীয় কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, শাহ সুজার একজন কর্মকর্তা শাহরিয়ার আব্দুল্লাহ ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন। স্থানীয়ভাবে বলা হয় যে, শাহরিয়ার আব্দুল্লাহ তাঁর প্রভুর সম্মানে এটি নির্মাণ করেন এবং নাম দেন ‘সুজা মসজিদ’। এই কিংবদন্তির পেছনে কিছু সত্যতা থাকলেও থাকতে পারে, কেন না শাহ সুজার সময়ে কুমিল্লার মুগলটুলীতে নির্মিত আর একটি মসজিদের সাথে এর অভ্যন্তরীণ গঠন ও নির্মাণশৈলীর যথেষ্ট মিল লক্ষ্য করা যায়। [এম.এ বারি]