কোয়াশিওরকর

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৫২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কোয়াশিওরকর (Kwashiorkor)  শিশুদের প্রোটিন ঘাটতিজনিত এক রোগ। বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার পরে সাধারণত এ রোগ দেখা দেয়। এ রোগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে অস্পষ্ট ধরনের জড়তা বা নিষ্ক্রিয়তা এবং খিটমিটে ভাব; পরবর্তী পর্যায়ে ডায়রিয়া, রোগ সংক্রমণ প্রবণতা, শরীরে পানি জমা, ত্বকের প্রদাহ এবং যকৃতের স্ফীতি দেখা দেয়। চুলের রং ক্রমে লালচে হয়ে যায়। রোগ গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী হলে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি কখনই সম্পূর্ণ হয় না।

বিশ্বের দরিদ্র জনবহুল এলাকাগুলিতে কোয়াশিওরকরের প্রকোপ ব্যাপক, এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে, যেখানে শিশুখাদ্য মূলত শর্করা খাদ্যশস্য ও শাকসবজির মধ্যে সীমিত। আরও যেসব অঞ্চলে এ রোগ ব্যাপক আকারে দেখা যায় সেসবের মধ্যে রয়েছে, আফ্রিকার কিছু অংশ, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া। যথেষ্ট পরিমাণে শর্করাসমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়ার পরেও মায়ের দুধ ছাড়ানোর পর যেসব শিশু আর দুধ বা মাংস খেতে পায় না তাদের কোয়াশিওরকর হওয়ার আশঙ্কা থাকে; কারণ বিভিন্ন প্রোটিন উপাদান ও কিছু নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড যেগুলো শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

অপুষ্টি দূরীকরণের কাজে বিগত কয়েক দশকে কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনও অপুষ্টির হার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে কোয়াশিওরকরসহ নানা অপুষ্টিজনিত রোগে বহু শিশু মারা যায়। যারা বেঁচে থাকে তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের শতকরা ৬০ জনের দৈহিক ওজন হয় স্বাভাবিকের কম, অর্ধেকের বেশির বৃদ্ধি দারুনভাবে ব্যাহত হয়।

১৯৮৬ সাল থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং এনজিওদের সহায়তায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে কতকগুলি জনগোষ্ঠীভিত্তিক কর্মসূচি ও সচেতনতা সৃষ্টিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ফলে বাংলাদেশে শিশুদের ওজনস্বল্পতা হ্রাস পেয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এ সময়কালে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৯৪ থেকে কমে ৭৭-এ নেমে এসেছে (১৯৭৪ সালে এ হার ছিল প্রায় ১৪০)।

এমন লক্ষণীয় অগ্রগতি সত্ত্বেও অপুষ্টির কারণে মৃত্যু ও কর্মশক্তি হ্রাসের সমস্যাটি এখনও এদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। ১৯৯৫ সালে বিশ্বব্যাংক ও ইউনিসেফ (UNICEF)-এর সহায়তায় সরকার বাংলাদেশ সমন্বিত পুষ্টি প্রকল্প (BINP) শুরু করে। বিশ্ব জুড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিচালিত বৃহৎ পরিসরের পুষ্টি প্রকল্পের অন্যতম এ প্রকল্পের সুফল বাংলাদেশের তিন কোটির অধিক পরিবারে পৌঁছেছে। কম্যুনিটি পর্যায়ে কাজের জন্য এ প্রকল্প যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছে। এর অধীনে পুষ্টি বিষয়ক সেবা ও পরামর্শ, শিশুর বিকাশ তত্ত্বাবধান এবং দু’বছরের কম বয়সী গুরুতর অপুষ্টির শিকার শিশু ও স্তন্যদায়ী মায়েদের বাড়তি খাবার সরবরাহ ইত্যাদি কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।

পর্যাপ্ত প্রোটিনযুক্ত খাদ্য সরবরাহ করে কোয়াশিওরকরের চিকিৎসা করা যায়। তবে সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে, অতিরিক্ত ক্যালরি বা প্রোটিন যেন বিপাক প্রক্রিয়ার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করে। কোয়াশিওরকরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সমস্যা যেমন ডায়রিয়া ও ইডিমার চিকিৎসাও সেসঙ্গে করা প্রয়োজন।  [এস.এম হুমায়ুন কবির]

আরও দেখুন অপুষ্টি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান