ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) ১৮৬০ সালের XXI আইনের আওতায় ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৫২ সালে তৎকালীন সরকার কর্তৃক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রকৌশলীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই সংস্থাটি ইনস্টিটিউটশন অব পাকিস্তান নামে ‘উন্নত জগৎ গঠন করুন’ লক্ষ্য নিয়ে কর্মকান্ড শুরু করে। ১৯৭২ সাল থেকে সংস্থাটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ নামে অভিহিত হয়।
সংগঠনটির উদ্দেশ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করা, প্রকৌশল পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ত্বরান্নিত করা, প্রকৌশলীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো, পেশাগতভাবে মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করা, আধুনিক প্রযুক্তিবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা ও তথ্যের প্রসার ঘটানো।
প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম ঢাকায় অবস্থিত সদর দফতর থেকে পরিচালিত হয়। ইনস্টিটিউশনের ৫টি প্রকৌশল বিভাগীয় কমিটি রয়েছে (১) পুরকৌশল (২) যন্ত্রকৌশল (৩) তড়িৎকৌশল (৪) রসায়নকৌশল এবং (৫) কৃষিকৌশল। এছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে এর ১৬টি কেন্দ্র ও ৩৩টি উপকেন্দ্র রয়েছে। বিশ্বের ৭টি দেশ তথা কাতার, AIT ব্যাংকক, কুয়েত, রিয়াদ, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, UAE-তে এর বৈদেশিক চ্যাপ্টার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রকৌশল প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করে এবং গবেষণা, সেমিনার ও বাৎসরিক কনভেনশনের আয়োজন করে। এটি নিয়মিতভাবে পেশাগত জার্নাল এবং সাময়িকী ও ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ প্রকাশ করে থাকে। আইইবির চারটি স্বতন্ত্র বোর্ড রয়েছে। এগুলো হলো ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ (ইএসসিবি), বাংলাদেশ প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার্স রেজিস্ট্রেশন বোর্ড (বিপিইআরবি), বোর্ড অব এক্রিডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকিনক্যাল এডুকেশন (বিএইটিই) এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি বোর্ড অব বাংলাদেশ (আইএসবিবি)।
আইইবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনা করা। এই কোর্স সমাপন শেষে প্রশিক্ষণার্থীরা আইইবির সহযোগী সদস্যপদ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারে। পরীক্ষা পাসের সনদ সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত প্রকৌশল পরীক্ষা পাসের সমতুল্য বলে স্বীকৃত। এই বিশেষ কোর্স এএমআইই কোর্স বলে অভিহিত।
আইইবিতে দুই ধরনের সদস্য রয়েছে কর্পোরেট ও নন কর্পোরেট। কর্পোরেট সদস্য দুই ধরনের ফেলো সদস্য ও সাধারণ সদস্য। নন কর্পোরেট সদস্যের মধ্যে রয়েছে অনারারি সদস্য, সহযোগী সদস্য, ছাত্র সদস্য এবং চাঁদাদাতা সদস্য। বর্তমানে আইইবির প্রায় ২৫,০০০ প্রকৌশলী সদস্য রয়েছে।
আইইবি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন জাতীয় সংস্থায় প্রতিনিধিত্ব করে। এ ছাড়া এটি ৫টি আন্তর্জাতিক প্রকৌশল সংগঠন তথা কমনওয়েলথ ইঞ্জিনিয়ার্স কাউন্সিল (সিইসি), ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশন্স (ডব্লিউএফইও), ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটশন্স অব সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়া (ফিয়েস্কা), ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (এফইআইআইসি) এবং ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনস অব এশিয়া প্যাসেফিক (এফইআইএপি)-এর সদস্য।
আইইবির সাথে ১৮টি বিদেশি ইনস্টিটিউশন ও এ্যাসোসিয়েশনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। এই সংস্থাগুলি হলো কানাডিয়ান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স, দি আমেরিকান সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স, দি ইনস্টিটিউশন অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইউকে, দি ইনস্টিটিউশন অব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স, ইউকে, দি ইনস্টিটিউশন অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইউকে, দি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া), দি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স পাকিস্তান, দি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স শ্রীলংকা, নেপাল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন, দি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মালয়েশিয়া, জাপান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স, কোরিয়া সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স, চায়না এ্যাসোসিয়েশন ফর সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, চাইনিজ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি, দি ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমি অব উজবেকিস্তান, দি ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমি অব তাজিকিস্তান এবং দিন ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমি অব কাজাকাস্তান।
[মেসবাহুর রহমান টুটুল]