আষাঢ়ী পূর্ণিমা
আষাঢ়ী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। গৌতম বুদ্ধের গৃহীজীবন ও বুদ্ধত্ব লাভোত্তর জীবনের বহুমাত্রিক স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল এ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথি। এদিন তিনি মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন, যৌবনে স্ত্রীপুত্রের মায়া ও বিত্তবৈভব বিসর্জন দিয়ে গৃহত্যাগ করেন এবং বুদ্ধত্ব লাভের পর প্রথম ধর্মদেশনা দান করেন। বুদ্ধের এ প্রথম ধর্মদেশনাকে বলা হয় ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র’। এ ছাড়া এ পূর্ণিমা তিথিতে তিনি যমক ঋদ্ধি (দিব্যশক্তি) প্রদর্শন করেন এবং ভিক্ষুসংঘকে আত্মবিশুদ্ধি ও আত্মবিশ্লেষণাত্মক চেতনায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বর্ষাব্রত পালনের নির্দেশ দেন। এদিন বুদ্ধদেব বারাণসীতে মহানাম, অশ্বজিৎ, বপ্প, ভদ্রিয় ও কোন্ডষা এ পাঁচজনকে তাঁর অর্জিত সিদ্ধিতত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন। জগতে বুদ্ধবাণীর প্রথম প্রকাশ ঘটে এদিনই। তাই ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আষাঢ়ী পূর্ণিমা বিশেষ গুরুত্ববহ।
আষাঢ়ী পূর্ণিমার শিক্ষা সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সাধনা ও কর্মপ্রচেষ্টায় সফলতা ছাড়া বিফলতা নেই; বিষয়-আসক্তিতে কীর্তি, খ্যাতি এবং মানসিক ও শারীরিক শান্তি নেই; ত্যাগেই শান্তি, ত্যাগেই মহত্ত্ব, ত্যাগেই মুক্তি এবং ত্যাগেই নির্বাণ। জীবনে ত্যাগের চর্চা অত্যন্ত কঠিন। তাই ক্রমিক প্রচেষ্টায় ত্যাগের এ শক্তি ও যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। একবার অর্জিত হলে সে ত্যাগচেতনা অনন্ত জীবনের অফুরন্ত সম্পদে রূপ লাভ করে। বুদ্ধও তাঁর জাগতিক সম্পদ রাজ্য, স্ত্রীপুত্র পরিত্যাগ করে অনন্ত জগতের অধীশ্বর হতে সক্ষম হয়েছিলেন। এদিন বিহারে বিহারে পূজা-অর্চনাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকারা এদিন উপবাসব্রত গ্রহণ করেন। [সুকোমল বড়ুয়া]