আর্তেজীয় অবস্থা
আর্তেজীয় অবস্থা (Artesian Condition) পাম্প ছাড়াই কূপের মুখ দিয়ে সার্বক্ষণিক পানি উঠতে থাকে এমন একটি অবস্থা। আবদ্ধ ভূগর্ভস্থ জলস্তরে (aquifer) শিলাস্তর ভেদ করে কূপ খনন করা হলে অতিরিক্ত জলস্থৈতিক (hydrostatic) চাপের কারণে পানি অনুভূমিক তলের চেয়েও উপরে উঠতে সক্ষম হয়। যখন একটি ভূগর্ভস্থ জলস্তর অপেক্ষাকৃত অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে এঁটে থাকার কারণে চাপের সৃষ্টি হয়, ভূগর্ভস্থ জলস্তরটি তখন ‘আর্তেজীয়’ অবস্থায় আছে বলা যায়। আর্তেজীয় অবস্থায় পানি ভূ-পৃষ্ঠের উপর পর্যন্ত উঠতে পারে, আবার হয়ত নাও পারে। এ ধরনের অবস্থায় অন্তঃভূজলপৃষ্ঠের উল্লেখ না করে ভূ-বিজ্ঞানীগণ বরং চাপমাত্রিক তলের উচ্চতা উল্লেখ করেন, অর্থাৎ অনাবদ্ধ অবস্থায় থাকলে ওই পানি চাপের কারণে যে উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে সক্ষম হতো। এ অনুভূমিক তল সম্পৃক্ত শিলাসমূহে আবদ্ধ ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উপরিভাগের চেয়ে খানিকটা উঁচু এবং তা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরে হতে পারে। আর্তেজীয় অবস্থা কয়েকটি কারণে সৃষ্টি হয়: ক) হেলে থাকা ভূগর্ভস্থ জলস্তর যার নিম্ন প্রান্ত ভূগর্ভে আবদ্ধ ও উপর প্রান্ত উন্মুক্ত, খ) ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উপরে ও নিচে অপ্রবেশ্য শিলাস্তরমালার অবস্থান যা অনুস্রবণ রোধ করে এবং জলস্থৈতিক চাপ বৃদ্ধি সম্ভবপর করে, গ) ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উন্মুক্ত প্রান্ত দিয়ে অধঃক্ষেপণের অনুপ্রবেশ, এবং ঘ) একটি ঝর্ণা বা কুয়ার উপস্থিতি যা দিয়ে ভূগর্ভস্থ জলস্তর থেকে পানি বের হতে পারে।
গাঙ্গেয় প্লাবনভূমি ও আত্রাই অববাহিকা এলাকায় আর্তেজীয় অবস্থার ভূগর্ভস্থ জলস্তর দেখা যায়। রাজশাহী গ্রস্ত উপত্যকা, রাজশাহী-চারঘাট-জয়পুরহাট গ্রস্ত মালভূমি এবং রংপুর-লালমনিরহাট স্তরযুক্ত ভূগর্ভস্থ জলস্তরসমূহেও আর্তেজীয় অবস্থা বিদ্যমান। চট্টগ্রামের পাদদেশীয় অবক্ষেপ, নোয়াখালী জেলার মেঘনা মোহনার প্লাবনভূমি এবং সার্বিকভাবে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাসমূহ ব্যাপক ভূগর্ভস্থ পানি উন্নয়নের পক্ষে অনুকূল নয়; কারণ, এ এলাকাগুলিতে ভূগর্ভস্থ জলস্তরসমূহ আর্তেজীয় অবস্থায় রয়েছে। [মোঃ সাজ্জাদ হোসেন]