আড়তদার
আড়তদার একটি সুপ্রাচীন কারবার প্রতিষ্ঠান। প্রাক্-মুদ্রাযুগে, যখন লেনদেন হতো দ্রব্য বিনিময়ের মাধ্যমে, তখন থেকেই আড়ত-এর উদ্ভব। যোগাযোগের একটি নির্দিষ্ট সুবিধাজনক জায়গায় আড়ত বসত। বিভিন্ন জায়গা থেকে বাণিজ্যিক পণ্য এখানে এসে জমা হতো রপ্তানির জন্য। এসব দ্রব্য দালালরা গ্রহণ করে নিজেদের যে গুদামে রেখে সুবিধামতো সময়ে বিক্রয় করত সাধারণত সে গুদামকে বলা হতো আড়ত এবং এর মালিককে বলা হতো আড়তদার। তার কাজ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কৃষিজাত দ্রব্যাদি নিজের গুদামে কমিশনের ভিত্তিতে বিশেষভাবে সংরক্ষণ ও তা থেকে পর্যায়ক্রমিক ছাড়করণ। তিনি মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা ক্ষুদ্র দোকানদারদের দ্রব্যাদি সরবরাহ করেন। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রয়োজনীয় মুহূর্তে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের নিকট নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় করেন। কোনো কোনো সময় আড়তদারের সহযোগিতায় এসব ব্যবসায়ী যথেষ্ট মুনাফা অর্জন করেন। তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই নির্দিষ্ট বাজার থেকে দূরে অবস্থান করেন বলে সুবিধামতো সময়ে পণ্য ক্রয় করতে পারেন না এবং তা বিক্রি করে অধিক মাত্রায় মুনাফা অর্জনে সক্ষম হন না। এ কারণে তারা আড়তদারের সাথে চুক্তি করেন। আড়তদারই মজুদকৃত দ্রব্যসামগ্রী যথাসময়ে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন এবং বিক্রিত পণ্যসামগ্রীর ওপর থেকে একটা নির্দিষ্ট কমিশন গ্রহণ করেন। সাধারণত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং আড়তদারের মধ্যে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয়ের আগেই কমিশন সংক্রান্ত চুক্তি সস্পাদিত হয়। ফলে বিক্রীত পণ্যাদির মালিক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাজারের গতিপ্রকৃতির সাথে তাল রেখে ব্যবসায় পরিচালনা করতে সক্ষম হন। সাধারণত বড় ব্যবসায়ীদের কখনও আড়তদারের দ্বারস্থ হতে হয় না। কারণ তাদের নিজেদের গুদাম থাকে এবং ব্যবসায়িক কাজকর্ম সম্পাদনের ভিত্তিটাও থাকে সুদৃঢ়। মাঝে মাঝে আড়তদাররা তাদের মক্কেল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঠকান, আড়তে রক্ষিত দ্রব্যসামগ্রী অস্বাভাবিক ও অলাভজনক দামে বিক্রয় করেন। সাধারণ আড়তদাররা বাজারে একটা অফিস স্থাপন করে ব্যবসায় পরিচালনা করেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সামগ্রীসহ সেখানেই তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন ও উভয়ের লেনদেনের পরিমাণ নির্ধারণ করেন। সাধারণত একবার এ চুক্তি সস্পাদিত হলে কেউ তা অমান্য করেন না। ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের সঙ্গে অবাধে ব্যবসায়িক লেনদেন করেন এবং বিশ্বস্ততার সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখেন। [শারমীন নাজ]