অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হিন্দুধর্মীয় সংস্কার বিশেষ। ‘অন্ত’ শব্দের অর্থ শেষ, ‘ইষ্টি’ শব্দের অর্থ সংস্কার। মৃত্যুর পরে হিন্দুদের শবদাহ ক্রিয়াকেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বলে। দাহের আগে ঘি মাখিয়ে শবদেহ স্নান করানো হয়। তারপর চন্দন মাখিয়ে তার দু কান, নাকের দুটি ছিদ্র, দুটি চোখ ও মুখে মোট সাত টুকরা সোনা বা কাঁসা দিয়ে মৃতের উদ্দেশ্যে পিন্ড দান করা হয়। শব চিতায় স্থাপন করার পর তা তিনবার প্রদক্ষিণ করে পুত্র (প্রধানত জ্যেষ্ঠপুত্র) বা কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মুখাগ্নি করে। দাহকার্য শেষ হলে চিতাগ্নিতে এক এক করে সাত টুকরা ছোট কাঠ দিয়ে জ্বলন্ত চিতার উপর সাতবার আঘাত করতে হয়। তারপর যিনি মুখাগ্নি করেন তিনি সাত কলসি এবং অন্যরা এক এক কলসি জল দিয়ে চিতার আগুন নেভান। এরপর অদগ্ধ দেহাংশ, ভস্ম ইত্যাদি মাটির পাত্রে সংগ্রহ করে জলে ভাসানো হয়। স্নান করে বাড়ি ফিরে নিমপাতা দাঁতে কেটে আগুন, লোহা, মটর ডাল ইত্যাদি (মতান্তরে পাথর, আগুন, জল, গোবর, সাদা সরষে) স্পর্শ করে বাড়িতে ঢুকতে হয়। নিয়মগুলি এখন দিনে দিনে সহজ করা হচ্ছে। সাধু-সন্ন্যাসী, শিশু, সাপে কাটা ব্যক্তি এবং বিশেষ কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে জলসমাধি বা জলে ভাসিয়ে দেওয়া, কিংবা মৃৎসমাধি দেওয়ার রীতি আছে। দাহ করার কাজে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে চন্দনকাঠ বা চন্দনগুঁড়া ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সাধারণ লোকের ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। [অঞ্জলিকা মুখোপাধ্যায়]