শ্রীকাইল কলেজ
শ্রীকাইল কলেজ কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার অন্তর্গত শ্রীকাইল গ্রামে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজসেবক হিসেবে খ্যাত ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রম এবং মেধার মাধ্যমে অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থা থেকে তিনি বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছিলেন। তদানীন্তন ত্রিপুরা জেলার (বৃহত্তর কুমিল্লা) মধ্যে শ্রীকাইল কলেজ ছিল প্রথম গ্রেডের দ্বিতীয় কলেজ। কলেজটি যাত্রা শুরু করে মাত্র ৫২ জন ছাত্র নিয়ে এবং ২০০০ সালে এর ছাত্র সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৯০০। শুরুতে এই কলেজে কোন ছাত্রী ছিল না। ২০০০ সালে ছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৪০০।
বর্তমানে কলেজটিতে ৩৪ শিক্ষক রয়েছেন। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করে। তবে কলেজটি প্রথমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১৯৪৫ সালে যখন এই কলেজের ছাত্র অরুণ দত্ত অবিভক্ত বাংলার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। গত কয়েক বৎসর ধরে প্রতিবছরই এই কলেজের দুই-তিন জন ছাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে আসছে।
কলেজের গ্রন্থাগারে ছয় হাজার গ্রন্থ এবং সাময়িকী রয়েছে। কলেজ গবেষণাগার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দ্বারা সুসজ্জিত। কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তঃকলেজ ক্রীড়ায় নিয়মিত যোগদান করে থাকে। এই কলেজে বিএনসিসি এবং রোভার স্কাউটিং ইউনিটও রয়েছে। কলেজটির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ দৃঢ়। কলেজের আয়ের উৎস হচ্ছে জমি (৩০ একর), সালদা নদী এলাকায় অবস্থিত সম্পত্তি, শ্রীকাইল বাজারের কিছু দোকানপাট, ছাত্রবেতন এবং সরকারি অনুদান। কলেজের অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে একটি তিনতলা একাডেমিক-প্রশাসনিক ভবন, অধ্যক্ষের জন্য একটি তিনতলা আবাসিক ভবন, শিক্ষকদের জন্য ২০টি আবাসিক ফ্ল্যাট, একটি মিলনায়তন এবং অবিবাহিত শিক্ষকদের জন্য ১৪টি বাসকক্ষ।
কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক, প্রকৌশলি, ডাক্তার, সরকারি কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, শিল্পী, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী। মুক্তিযুদ্ধের সময় শ্রীকাইল কলেজ গৌরবজনক ভূমিকা পালন করে। এই কলেজের দুইজন ছাত্র মোঃ মোর্শেদ এবং হাসান আলী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। প্রাক্তন ছাত্র শাহ্জাহান সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত হন। [গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]