দামুড়হুদা উপজেলা
দামুড়হুদা উপজেলা (চুয়াডাঙ্গা জেলা) আয়তন: ৩০৮.১১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৯´ থেকে ২৩°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৯´ থেকে ৮৮°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে আলমডাঙ্গা এবং মেহেরপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং মেহেরপুর সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৫৫২৭৯; পুরুষ ১৩২০৪২, মহিলা ১২৩২৩৭। মুসলিম ২৪৮৯৯৪, হিন্দু ৪৬৭৭, খ্রিস্টান ২৩, বৌদ্ধ ১৫৩৮ এবং অন্যান্য ৪৭।
জলাশয় চিত্রা, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব নদী; কানাইডাঙ্গা খাল, হাতিডাঙ্গা খাল, কার্পাসডাঙ্গা খাল এবং মীরগাঙ্গী বিল, রাইসা বিল ও ডলকা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন দামুড়হুদা থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৭ | ৭৮ | ১০২ | ৫৭২১৯ | ১৯৮০৬০ | ৩০৮.১১ | ৫১.৯৬ | ৩৯.০৯ |
পৌরসভা | ||||
আয়তন(বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার(%) |
১৭.০৩ | ৩ | ৩৪২৩১ | ৯৮২ | ৫৪.৫২ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন(একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | |
</nowiki>পুরুষ | মহিলা | |||
দামুড়হুদা ১১ | ৯১৩১ | ১৭৯১৫ | ১৬৫০১ | ৪২.৪৩ |
পারকৃষ্ণপুর মদনা ২৩ | ৩৯৬৩ | ১১৮৪০ | ১১১৩৭ | ৪০.০১ |
হাউলী ৩৫ | ১১৬০৫ | ১৭২৮৫ | ১৬৩৩২ | ৪২.২৫ |
জুড়ানপুর ৪৭ | ১১৯০৫ | ১৫৯১৪ | ১৫০৯৭ | ৩৬.৪৩ |
কার্পাসডাঙ্গা ৫৯ | ১০৮২৯ | ২১৩৩৩ | ১৯৭৫৩ | ৪০.৯৬ |
কুড়ালগাছী ৭১ | ১২৮৯৬ | ১৩২৪৮ | ১২৬৭৬ | ৩৮.০০ |
নতিপোতা ৮৩ | ১২১৭০ | ১৬৫৭৮ | ১৫৪৩৯ | ৩৯.২১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মালেকুল গাউছের মাযার (চারুলিয়া গ্রাম), রেজাশাহ চিশতির মাযার (কোষাঘাটা গ্রাম), কুতুব-উল আলম শাহ্’র মাযার (মুন্সীপুর), অজ্ঞাত পীরের মাযার ও মসজিদ (শিবনগর), জগন্নাথপুর মন্দির।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে নীলবিদ্রোহ ও কৃষক-আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৮৬৯ ও ১৮৭৩ সালের খাজনাবন্ধ আন্দোলনে এ এলাকার কৃষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯২০ সালের এপ্রিল মাসে এ উপজেলায় বাংলার প্রথম কৃষক সম্মেলন হয়। ১৯৭১ সালে দামুড়হুদার মদনা গ্রামে পাকবাহিনী অসংখ্য ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং অনেক নিরীহ লোককে হত্যা করে। ৫ আগস্ট মেহেরপুর জেলার বাগোয়ান গ্রামের মাঠে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন দর্শনা-মুজিবনগর আঞ্চলিক সড়কের পাশে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২২৮, মন্দির ৪, গীর্জা ৪।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪.০০%; পুরুষ ৪৩.৭৮%, মহিলা ৪০.১১%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৯, কিন্ডার গার্টেন ৪, মাদ্রাসা ২৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নাটুদহ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুল (১৯১৩), মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), কুড়ালগাছী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৩) কলাবাড়ী-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৬), দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মদনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
চিত্র:দামুড়হুদা উপজেলা html 88407781.png
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৭০, সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র ৩, সিনেমা হল ২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৫৩%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৮%, শিল্প ০.৫৩%, ব্যবসা ১৪.১১%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৩৪% চাকরি ৬.৫৬%, নির্মাণ ০.১০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট আন্ড রেমিটেন্স ০.৩৬%, এবং অন্যান্য ৫.৮৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৮১%, ভূমিহীন ৪০.১৯%। শহরে ৪৮.০২% এবং গ্রামে ৬৩.১৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল আখ, ধান, গম, ডাল, আলু, যব, ভুট্টা, পাট, ছোলা, পান, পেঁয়াজ।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, সরিষা, তামাক, নীল।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, কলা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩৪, হাঁস-মুরগী ৪২৪; প্রজনন কেন্দ্র ৩।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৪.৬০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩৪ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, চিনিকল, ময়দাকল, বরফকল, স’মিল।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঁসা ও পিতল শিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, বেতের কাজ প্রভৃতি।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ১। দামুড়হুদা হাট, ডুগডুগির হাট উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, কলা, আম, চিনি, পেঁয়াজ, মুগ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৭.৩৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৫৩%, পুকুর ০.১২%, ট্যাপ ১.০২% এবং অন্যান্য ৪.৩৩%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৮.৭৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর (গ্রামে ১৪.২৭% এবং শহরে ৩৪.৬৩%) এবং ৫০.৬৫% পরিবার (গ্রামে ৫২.৭১% এবং শহরে ৪৩.৩৯%) অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । ৩০.৫৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, ওয়েভ ফাউন্ডেশন। [ইমন সিদ্দিক]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দামুড়হুদা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।