নগরকান্দা উপজেলা
নগরকান্দা উপজেলা (ফরিদপুর জেলা) আয়তন; ১৯৮.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৯´ থেকে ২৩°২৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৩´ থেকে ৮৯°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফরিদপুর সদর ও চরভদ্রাসন উপজেলা, দক্ষিণে মুকসুদপুর উপজেলা, পূর্বে ভাঙ্গা ও সদরপুর উপজেলা, পশ্চিমে সালথা উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৭৭৭১০; পুরুষ ৯১০৯৪, মহিলা ৮৬৬১৬। মুসলিম ১৬১০৬৫, হিন্দু ১৬৬২৬ এবং অন্যান্য ১৯।
জলাশয় প্রধান নদী: ভূবনেশ্বর ও শীতলক্ষ্যা; জালিবাড়ী খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন নগরকান্দা থানা গঠিত হয় ১৯০৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ১২৬ | ১৭৭ | ১২৯৯৮ | ১৬৮২৯৬ | ৮৯৫ | ৫০.০ | ৪০.০৫ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৭.৫৭ | ৯ | ১৫ | ৯৪১৪ | ১২৪৪ | ৪৯.২ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৩.৯৫ | ১ | ৩৫৮৪ | ৯০৭ | ৫২.২ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন(একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | |
|| || পুরুষ | মহিলা | |||
কাইচাইল ৫০ | ৩১১৫ | ৭৯১১ | ৭৫৩৪ | ৪১.৯১ |
কোদালিয়া শাহীদনগর ৬৭ | ৫০৯৩ | ৬৯৩৬ | ৬৭৩৮ | ৪০.২৬ |
চর যশোরদি ২২ | ৮০৮৮ | ১৩৭৮৭ | ১৩০৮৬ | ৩৯.৪২ |
ডাঙ্গি ২৭ | ৫৭৮১ | ১১২৭২ | ১০৮৩৪ | ৩৯.৮৪ |
তালমা ৯৪ | ৭০৩৬ | ১৪০২২ | ১৩২৬৭ | ৩৭.২০ |
পুরাপাড়া ৭২ | ৪০৬২ | ৭৩১২ | ৬৮৫৪ | ৩৯.৮৯ |
ফুলসুতি ৩৩ | ২১৬২ | ৪৪০৯ | ৪৪৯৭ | ৩৮.৯০ |
রামনগর ৮৩ | ৬২৪১ | ৯৭৭৭ | ৯২৭২ | ৩৭.২৫ |
লস্করদিয়া ৫৫ | ৬১৩৫ | ১০৭০০ | ১০০৮৮ | ৪১.৫১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কাঠিয়ার কালিবাড়ি, তালমার কালীমন্দির, হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রঃ) সাবেক খানকাহ ও বসতবাড়ি, সুফি ও মরমী সাধক মেছের শাহের মাজার, লস্করদিয়ায় পীর শাহ আবদুর রহমান দানিশমান্দের মাজার।
চিত্র:নগরকান্দা উপজেলা html 88407781.png
" name="_x0000_i1025
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা নগরকান্দা পুলিশ ফাড়ি আক্রমণ করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র হস্তগত করে। ৩০ এপ্রিল পাকবাহিনী চর যশোহরদি গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ৪ মে প্রায় ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা পুনরায় নগরকান্দা থানা আক্রমণ করে অস্ত্র হস্তগত করে এবং পাকসহযোগী ইন্সপেক্টরকে হত্যা করে। ৩০ মে পাকবাহিনী কোদালিয়া থেকে বাগাট পর্যন্ত ৫ টি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। এতে ১৮ জন নিরীহ লোক মারা যায়। ৩১ মে পাকসেনারা হেলিকপ্টার দিয়ে গুলিবর্ষণ করে এবং ৯ টি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। তালমা বাজারে রাজাকারদের ক্যাম্পে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষে প্রায় ৮ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নগরকান্দায় পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করলে রাজাকারসহ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ও গণকবর ১ (কোদালিয়া)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯৫, মন্দির ৩৮, মাযার ২।
শিক্ষারহার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৫০%; পুরুষ ৪৩.৫%, মহিলা ৩৫.৫২%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিলনালিয়াময়েজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), এমএন একাডেমি (১৯১৬)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী নগরকান্দা বার্তা, সাহিত্য পত্রিকা, মুক্তি, জাগরণ, সময়, মানবজীবন, মানচিত্র।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ২৫০, সিনেমা হল ১, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৮.৯৬%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮০%, শিল্প ০.৭৪%, ব্যবসা ১১.৪২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.২৫%, চাকরি ৪.৯১%, নির্মাণ ১.১০%, ধর্মীয় সেবা ০.২৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৭% এবং অন্যান্য ৫.৯২%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৭.৪৫%, ভূমিহীন৩২.৫৫%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, কলাই, সরিষা, আলু, আখ খেজুর।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি যব, তিল, কাউন, তিসি, অড়হর।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, পেঁপে, কলা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৩২, গবাদিপশু ৬২, হাঁস-মুরগি ২২, হ্যাচারি ৩।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২২০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৭০ কিমি; নৌপথ ১৪ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুরগাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চালকল ২৫০, আখ মাড়াই কল ২।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৬, মেলা ৩। তালমা হাট, রসুলপুর হাট, ময়েনদার হাট, নগরকান্দা হাট এবং ছাগলদী মেলা, কাঠিয়া কালীবাড়ি মেলা ও খালিশপুটি মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য গম, পাট, সরিষা, খেজুর গুড়, কলা।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮.৩৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৪১%, ট্যাপ ০.৪%, পুকুর ১.০২% এবং অন্যান্য ৩.১৭%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৭.৯৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৪.৯৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭.০৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৫, হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার ৯, ক্লিনিক ২।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা। [জায়েদ হোসাইন লাকী]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নগরকান্দা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।