গোদাগাড়ী উপজেলা
গোদাগাড়ী উপজেলা (রাজশাহী জৈলা) আয়তন: ৪৭২.১৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২১´ থেকে ২৪°৩৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১৭´ থেকে ৮৮°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নবাবগঞ্জ সদর ও তানোর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও গঙ্গা নদী, পূর্বে পবা ও তানোর উপজেলা, পশ্চিমে নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৭৯৫৪৫; পুরুষ ১৪৩২০২, মহিলা ১৩৬৩৪৩। মুসলিম ২৪২৭৩৩, হিন্দু ২০৯৪৪, বৌদ্ধ ৯৪৭৬, খ্রিস্টান ১৮৬ এবং অন্যান্য ৬২০৬। এ উপজেলায় সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় গঙ্গা ও মহানন্দা নদী এবং পালতোলা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন গোদাগাড়ী থানা গঠিত হয় ১৮৬৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
২ | ৯ | ৩৮৯ | ৩৯৮ | ৩৭৬৩১ | ২৪১৯১৪ | ৫৯২ | ৫২.১২ | ৪০.৪৯ |
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৩.২৫ | ৩ | ৪৭২৫ | ১৪৫৪ | ৫২.৭৭ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
গোগ্রাম ৪৭ | ১৭৩৬২ | ১৩০১৩ | ১২৪৬৯ | ৪৩.৩২ |
গোদাগাড়ী ৩৮ | ১৯৯৩ | ৬৯০৭ | ৬৬৯০ | ৩২.১৩ |
চর আষাড়িয়াদহ ১৯ | ৯০৮৮ | ৯২১৪ | ৮০৮৯ | ৩৩.৭৬ |
দেওপাড়া ২৮ | ১৩০১৩ | ১৬৬৬৬ | ১৫৮৬১ | ৪১.৯৯ |
পাকড়ি ৭৬ | ১৫৭৯৯ | ১৬১০৮ | ১৫৭৫৬ | ৪১.১৬ |
বাসুদেবপুর ১৬ | ৪৬৮৪ | ১২২৯১ | ১২০২৫ | ৪৯.৫৬ |
মাটিকাটা ৫৭ | ৯৭৭৫ | ২০০৫৬২ | ১৯৭৯৮ | ৪৫.০১ |
মোহনপুর ৬৬ | ২৩১৭৩ | ১৫৭৮০ | ১৫০৪৪ | ৩১.৫৮ |
ঋষিকুল ৮৫ | ১৪৬৫৯ | ১৫৩৮১ | ১৪৯৮৫ | ৪০.৪৩ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ উপরবাড়ী টিলা বৌদ্ধ বিহার (পাল আমল), কুমারপুরের আলী কুলীবেগের মাযার (অষ্টম শতাব্দী), দেওপাড়া গ্রামে পদুমসার শিব মন্দির, দীঘি ও প্রশস্তি শিলালিপি (একাদশ শতাব্দীতে রাজা বিজয় সেন নির্মাণ করেন), হযরত শাহ সুলতানের মাযার (চতুর্দশ শতাব্দী, সুলতানগঞ্জ), এবং খেতুর গ্রামের শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গবাড়ী মন্দির (১৫৮২) ও মান্ডইলের জৈন মন্দির।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ইপিআর সিপাই আব্দুল মালেক শহীদ হন। ২৬ ও ৩০ মে গোদাগাড়ী উপজেলায় পাকবাহিনী ৩১ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫৮০, মন্দির ২১, গির্জা ৯, তীর্থস্থান ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: খেতুরের শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গবাড়ী মন্দির (১৫৮২), আহলে হাদিস জামে মসজিদ (১৯৪৯), প্রেমতলী জামে মসজিদ (১৯৪০), ফরাদপুর জামে মসজিদ (১৯৫০), কাঁঠালবাড়িয়া শেখেরপাড়া জামে মসজিদ (১৯৬০), প্রেমতলী শাহ জঙ্গীর মাযার, জাহানাবাদ শাহ মহিউদ্দিনের মাযার, সুলতানগঞ্জে শাহ নজরের মাযার, মান্ডইলের জৈন মন্দির, শ্রী শ্রী খেতুরধাম তীর্থ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.১%; পুরুষ ৪৩.৬%, মহিলা ৪০.৫%। কলেজ ১২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪০, মাদ্রাসা ২০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মাটিকাটা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, গোদাগাড়ী স্কুল ও কলেজ (১৯০৫), গোদাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৩)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাময়িকী: বরেন্দ্রী।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, ক্লাব ৫০, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯.৯৮%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৯৫%, শিল্প ০.৫৭%, ব্যবসা ১১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯৯%, চাকরি ৪.৬১%, নির্মাণ ১.১৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৭% এবং অন্যান্য ৬.৩২%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪২.৩৯%, ভূমিহীন ৫৭.৬১%। শহরে ৪২.৯২% এবং গ্রামে ৪২.৩১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, মাসকলাই, আঁখ, ছোলা, মসুরি, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, তিল, সরিষা, কাউন, তিসি, রাই, তরমুজ।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, লিচু, বেল, তাল।
হাঁস-মুরগির খামার হাঁস-মুরগি ৯।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫২০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪১৩.৭৭ কিমি; রেলপথ ৩৯.২১ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, ছাপাখানা, ওয়েল্ডিং প্রভৃতি।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তামা ও কাঁসাশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ প্রভৃতি।
হাটবাজার, মেলা হাটবাজার ২৬, মেলা ১০। গোদাগাড়ী হাট, বিদিরপুর হাট, প্রেমতলী হাট, মহিষালবাড়ী হাট, রেলবাজার হাট, কাঁকন হাট, রাজবাড়ী হাট এবং প্রেমতলী খেতুরের মেলা, সুলতানগঞ্জ সুলতান শাহেবের মেলা, কাঁকন হাটের মেলা, ললিতনগর মেলা, গোদাগাড়ী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, গম, মাসকলাই, মসুরি, আম, কাঁঠাল, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২১.৯৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৫৩%, ট্যাপ ০.৭১%, পুকুর ০.৭৮% এবং অন্যান্য ৪.৯৭%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ১১.৫৮% (গ্রামে ৯.৮৫% এবং শহরে ২৩.২৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪০.৯৯% (গ্রামে ৩৮.৪০% এবং শহরে ৫৯.১৬%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪৭.৪৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, বেসরকারি হাসপাতাল ২।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, ভিশন, কারিতাস, ঠেংগামারা মহিলা সবুজ সংঘ, এশিয়া। [এ কে এম কায়সারুজ্জামান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গোদাগাড়ী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।