শরী’আত

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

শরী‘আত  আরবি শব্দ যার অভিধানিক অর্থ পানি পান করার স্থান, জলাশয় বা কূপে যাওয়ার পথ, অনুসরণীয় স্পষ্ট পথ, অভ্যাস ইত্যাদি। এর বহুবচন ‘সারাই’। দীনী পরিভাষায় এর অর্থ ইসলামের আইন-কানুন ও পদ্ধতি যা আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং নবী রাসূলদের (আ) মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। আল-কুরআনে বলা হয়েছে: ... ‘‘ আমি আপনাকে (রাসূলকে) শরী‘আতের বিশেষ বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি, সুতরাং আপনি এর অনুসরণ করুন’’ (৪৫ঃ১৮)। শরী‘আতের সমার্থবাচকরূপে ফিক্হ শব্দটি ব্যবহূত হয়।

ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী, সাধারণত মানুষের কার্যের ভালমন্দ নির্ণয় করা হয় শরী‘আতের মানদন্ডে। শরী‘আত আল্লাহ এবং মানুষের বাহ্যিক সম্পর্ককে প্রধানত বিধিবদ্ধ করে, কিন্তু শরী‘আতের দ্বারা অভ্যন্তরীণ অনুভূতি ও মনোভাব সব সময় জ্ঞাত হওয়া যায় না ও নির্ণয় করা যায় না। সেজন্য প্রয়োজন হয় মা‘রিফতের। শরী‘আত ব্যতীত মা‘রিফতের ধারনা করা যায় না। শরী‘আত সূফীর যাত্রা পথের প্রথম ধাপ।

শরী‘আতের মূলনীতিগুলি আল্লাহ তা‘আলার প্রজ্ঞা ও ইচ্ছার ওপর প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘ দিনের নানা কারণ পরম্পরার ভিতর দিয়ে শরী‘আতের আইনসমূহ ক্রমশ বিকশিত হয়েছে। এ আইনের তাৎপর্য সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে আল্লাহ মানুষকে অনুমতি দিয়েছেন, সুতরাং শরী’আতের বিধানগুলি সাধারণত যুক্তিগ্রাহ্য। বিশ্বাসের সঙ্গে শরী’আতের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে শরী’আত প্রচলিত অর্থে একটি আইন মাত্র নয়, এটি এর অনুসারীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান যা ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে অভ্রান্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

শরী‘আতের বিধানগুলি সাধারণত তিন শ্রেণিতে বিভক্ত: (১) ‘ইবাদত-উপাসনা সংক্রান্ত কর্তব্য, (২) মু‘আমালাত - পারস্পরিক লেনদেন ও আচার আচরণ এবং (৩) ‘আদ্ল ও ‘উকূবাত - বিচার ও দন্ড সম্পর্কিত বিধান। মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্বের দিক দিয়ে এগুলি সমপর্যায়ের বলে গণ্য। ফিক্হের কিতাবগুলিতে এগুলির বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

শরী’আতের উৎস চারটি: (১) কুরআন, (২) হাদিস, (৩) ইজমা - বিশেষজ্ঞ ‘আলিমদের ঐকমত্য ও (৪) কিয়াস - সাদৃশ্য ভিত্তিক সিদ্ধান্ত। শরী‘আতের জ্ঞান প্রধানত কুরআন ও হাদিস থেকে লাভ করা যায়। প্রয়োজনে ইজমা ও কিয়াসকে কাজে লাগানো হয়। কালক্রমে এ চারটি উৎস থেকে প্রাপ্ত হুকুমগুলি গ্রন্থিত করা হয়। সেগুলিই ফিক্হের কিতাব যা শরী’আতের জ্ঞান অর্জনের জন্য অপরিহার্য অবলম্বন।

বাংলাদেশে শরী‘আত বলতে ইসলামী বিধানকে বুঝানো হয়। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মাদ্রাসায় শরী‘আত শিক্ষা দেওয়া হয়। স্কুল-কলেজেও ধর্মীয় শিক্ষা তথা শরী‘আত-শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এ শিক্ষা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের মুসলমানগণ শরী‘আত পালনে নিষ্ঠাবান।  [আ.ত.ম. মুছলেহউদ্দীন]