ইলিয়াস, আখতারুজ্জামান
ইলিয়াস, আখতারুজ্জামান (১৯৪৩-১৯৯৭) কথাসাহিত্যিক। পূর্ণনাম আখতারুজ্জামান মুহম্মদ ইলিয়াস। ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস বগুড়া শহরের নিকটবর্তী চেলোপাড়ায়। পিতা বদিউজ্জামান মুহম্মদ ইলিয়াস ছিলেন পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (১৯৪৭-১৯৫৩) এবং মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি।
আখতারুজ্জামান বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৫৮), ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ (১৯৬০) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি.এ অনার্স (১৯৬৩) ও এম.এ (১৯৬৪) ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরপরই তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সেখানে অধ্যাপনা করেন। তারপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ, মফিজউদ্দীন শিক্ষা কমিশনের বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা কলেজে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এদেশের প্রগতিশীল ও মানবতাবাদী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতিও তাঁর পরোক্ষ সমর্থন ছিল। তিনি কথাসাহিত্যিক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর লেখায় সমাজবাস্তবতা ও কালচেতনা গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষত, তাঁর রচনাশৈলীর ক্ষেত্রে যে স্বকীয় বর্ণনারীতি ও সংলাপে কথ্যভাষার ব্যবহার লক্ষণীয় তা সমগ্র বাংলা কথাশিল্পে অনন্যসাধারণ। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রচনা হলো: অন্যঘরে অন্যস্বর (১৯৭৬), খোঁয়ারি (১৯৮২), দুধভাতে উৎপাত (১৯৮৫), চিলেকোঠার সেপাই (১৯৮৭), দোজখের ওম (১৯৮৯), খোয়াবনামা ১৯৯৬), সংস্কৃতির ভাঙা সেতু ইত্যাদি।
বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ‘বাংলা একাডেমী পুরস্কার’ (১৯৮২), খোয়াবনামা উপন্যাসের জন্য ‘সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার’ (১৯৯৫) ও কলকাতার ‘আনন্দ পুরস্কার’ (১৯৯৬) লাভ করেন। তাঁর রচনা কয়েকটি ভারতীয় ভাষাসহ অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সম্প্রতি তাঁর চিলেকোঠার সেপাই নাটকে রূপায়িত হয়েছে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। [শফিউল আলম]