হুমায়ুননামা
হুমায়ুননামা গুলবদন বেগম রচিত হুমায়ুনের ইতিহাস সম্বন্ধে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান উৎস গ্রন্থ। বাবুর-এর কন্যা গুলবদন ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দের দিকে জন্মগ্রহণ করেন। হুমায়ুনের সিংহাসনে আরোহণকালে শাহজাদী ছিলেন প্রায় আট বছর বয়সী। জনৈক চাঘতাই মুগল খিজর খাওয়াজা খানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল এবং তাঁর বিবরণ হতে প্রতীয়মান হয় যে, গুলবদন ছিলেন সুশিক্ষিতা ও প্রতিভাময়ী। গুলবদন ছিলেন গ্রন্থ ও জ্ঞানের অনুরাগী। তিনি হুমায়ুন এবং রাজকীয় হারেমের অন্যান্য নারীদের বিশ্বাসভাজন ছিলেন।
হুমায়ুনের মৃত্যুর পর তিনি আকবর-এর কাছ থেকে সুরক্ষা ও সম্মান লাভ করেন। ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মক্কায় হজ্জ পালন করেন। ভারতে ফিরে আসার পর ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর মৃত্যু হয়। আকবর তাঁকে এতই শ্রদ্ধা করতেন যে তাঁর আত্মার শান্তির জন্য উদারভাবে দান করেন।
গুলবদন বলেন যে, আকবরের কাছ থেকে তিনি এই মর্মে এক আদেশ লাভ করেন যে তিনি বাবুর ও হুমায়ুন সম্পর্কে যা স্মরণ করতে পারেন তা যেন লিপিবদ্ধ করেন। বাবুর সম্পর্কে তাঁর বিবরণ সংক্ষিপ্ত, কিন্তু পুস্তকটির বেশির ভাগ অংশই জুড়ে রয়েছে হুমায়ুনের জীবনকাহিনী, তাঁর বিজয় ও পরাজয়সমূহ। হুমায়ুন যখন পারস্যে চলে যান তখন গুলবদন কাবুলে অবস্থান করেন। আফগান অঞ্চলে হুমায়ুন ও কামরানের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ তিনি আলোচনা করেছেন। রাজনৈতিক বিষয়সমূহের উপর আলোকপাত করা ছাড়াও গুলবদন সেকালের সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতি এবং মুগল রাজদরবারে প্রচলিত আদবকায়দা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কোন কোন ঘটনার জন্য গ্রন্থকার হারেমের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের বিশ্বাসযোগ্য বিবরণের উপর নির্ভর করেছেন।
হুমায়ুননামা ফারসি ভাষায় রচিত। কিন্তু মূলগ্রন্থে ফারসি ও তুর্কি শব্দাবলির মিশ্রণ ছিল। গুলবদনের গ্রন্থের একমাত্র কপিটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে এবং গ্রন্থের শুরুতে সংযুক্ত পৃষ্ঠায় নিম্নলিখিত শব্দগুলি উৎকীর্ণ রয়েছে; আহওয়াল হুমায়ুন পাদশাহ জামাহ কারদম গুলবদন বেগম বিনতে বাবুর পাদশাহ আম্মা আকবর পাদশাহ। এ.এস বেভারীজ গ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। [আবদুল করিম]