সিদ্দিকী, আবদুল হাই
সিদ্দিকী, আবদুল হাই (১৯০৩-১৯৭৭) আলেম, পীর, সমাজকর্মী। তাঁর প্রকৃত নাম আবু নসর মুহাম্মদ আবদুল হাই। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ফুরফুরায় তাঁর জন্ম। পিতা শাহ্ সুফি আবু বকর সিদ্দিকী (রা.) হযরত আবু বকর সিদ্দিকের (রা.) বংশধর ছিলেন বলে দাবি করা হয়। আবদুল হাই কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষালাভ ছাড়াও বিভিন্ন মাওলানার নিকট ইসলামী ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পিতার নিকট তিনি শরিয়ত ও মারিফত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং কঠোর সাধনা দ্বারা কামালিয়ত ও খেলাফত লাভ করেন। পিতার মৃত্যুর (১৯৩৯) পর তিনি ফুরফুরার পীরের গদীনশীন হন। ‘বড় হুজুর’ নামে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন।
সমকালের মুসলমানের ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতিতে আবদুল হাই সিদ্দিকী বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তিনি আঞ্জুমানে ওয়ায়েজিন (১৯১১), জমিয়তে উলামায়ে বাংলা ও আসাম (১৯৩৬) প্রভৃতি সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। খ্রিস্টান মিশনারিদের ইসলাম-বিরোধী অপপ্রচারের মোকাবিলা ও তা রোধ করা ছিল এসব সংগঠনের লক্ষ্য।
আবদুল হাই সিদ্দিকী একজন সুবক্তা ছিলেন। তিনি বাংলার বহু স্থানে ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা করেছেন। রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (১৯৪৪) সভাপতি হিসেবে তিনি মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলনে সমর্থন দান করেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিজয়ে তাঁর এ সংগঠনের বিশেষ ভূমিকা ছিল। তিনি লোকহিতার্থে জমিয়তে উলামায়ে হানাফিয়া সিদ্দিকীয়া, নূরুল ইসলাম বায়তুল মাল, হিজবুল্লাহ্ (১৯৪৮) প্রভৃতি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কলকাতায় মাসিক নেদায়ে ইসলাম (১৯৪৩) প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি এখনও ঢাকা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
মুসলমানদের শিক্ষাক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ অবদান ছিল। ইসলাম মিশন (১৯৬৩) প্রতিষ্ঠা, ফৎহিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার উন্নয়ন, ইউনিয়ন হেলথ সেন্টার, নিউ স্কীম হাই মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম ও ছাত্রাবাস উন্নয়ন, পশ্চিমবঙ্গ সিদ্দিকীয়া গার্লস হাই মাদ্রাসা (১৯৬৭) এবং ইসলাম মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে এবং ঢাকার মীরপুরে দারুস সালামে খানকাহ তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। এদেশে ইসলামের উন্নয়নে আবদুল হাই সিদ্দিকীর বিশেষ অবদান রয়েছে। [দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী]