রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরি
রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ ধরা হলেও এর গোড়াপত্তন হয় অনেক আগে। নাটোরের রাজা আনন্দনাথ রায় রামপুর-বোয়ালিয়ায় (রাজশাহী) একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে এটি ‘আনন্দনাথ লাইব্রেরি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৬৬ সালে আনন্দনাথের মৃত্যু হয়। কাজেই তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই কোন এক সময় গ্রন্থাগারটি স্থাপিত হয়েছিল। আনন্দনাথের পুত্র রাজা চন্দ্রনাথ রায় গ্রন্থাগারটির জন্য বার্ষিক ২০ পাউন্ড সাহায্য মঞ্জুর করেন। স্থানীয় সুধীবৃন্দও এর সাহায্যে এগিয়ে আসেন। ১৮৮৪ সালে এই লাইব্রেরিটিরই নামকরণ হয় ‘রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরি’। ক্রমে সমগ্র উপমহাদেশে এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বিভাগ-পূর্বকালে বরদাতে আচার্য পি.সি রায়ের সভাপতিত্বে অল ইন্ডিয়া গ্রন্থাগার সম্মেলনে রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরি বঙ্গদেশের লাইব্রেরিগুলির মধ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করে। দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমদানাথ রায় ১৮৮৪ সালে গ্রন্থাগারটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত (১৯২৫ খ্রি) উক্ত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর ক্রমান্বয়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কুমার শরৎকুমার রায় (১৯২৫-১৯৪২ খ্রি); নাটোরের মহারাজা যোগীন্দ্রনাথ রায় (১৯৪২-১৯৪৩ খ্রি); এবং দিঘাপতিয়ার রাজা বাবু কিশোরীমোহন চৌধুরী (১৯৪৩-১৯৫২ খ্রি)। ১৯৫২ সাল থেকে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকগণ পদাধিকার বলে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাজা-জমিদারগণই ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক ও কর্ণধার। ভারত বিভক্তির পরে তাঁদের অনেকেই দেশ ত্যাগ করার ফলে লাইব্রেরিটি ব্যবস্থাপনার দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে (১৯৭১ খ্রি) গ্রন্থাগারটি অব্যবস্থিত অবস্থায় পড়ে থাকায় অনেক বইপুস্তক ও আসবাবপত্র খোয়া যায়। স্বাধীনতার পরে গ্রন্থাগারটির পুস্তকসংখ্যার সঠিক তথ্য না থাকায় নতুনভাবে গ্রন্থতালিকা প্রণয়ন করতে হয়। ১৯৭৫ সালে গ্রন্থাগারটিকে কপিরাইট সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চারও পীঠস্থান। ১৯ ও ২০ জুলাই ১৯৮৪, গ্রন্থাগারটির শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপিত হয় এবং গ্রন্থাগার কর্তৃক প্রকাশিত হয় শতবর্ষ স্মারক গ্রন্থ: ১৯৮৪। বহু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থসহ রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরির বর্তমান পুস্তক সংখ্যা ৩৫,৭৬৯। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০। [এস.এম আবদুল লতিফ]