শিতলাই জমিদারি
শিতলাই জমিদারি সিরাজগঞ্জ জেলার শরতনগর রেল স্টেশনের প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। শিতলাইর জমিদারদের নামের সাথে পারিবারিকভাবে ‘মৈত্রেয়’ উপাধি আঠারো শতক থেকে সংযোজিত হয়। নাটোরের রাণী ভবানীর সময় চাঁদিপ্রসাদ মৈত্রেয় এ এলাকায় প্রচুর করমুক্ত ‘দেবোত্তর’ সম্পত্তি অর্জন করেন। তাঁর পুত্র জগন্নাথ মৈত্রেয় একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি লোকনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র এবং কমলমণি নামে দুই পুত্র ও এক কন্যা রেখে যান।
লোকনাথ মৈত্রেয় পড়াশোনার জন্য প্রথমে নাটোর এবং তারপর রামপুর-বোয়ালিয়ায় (রাজশাহী) গমন করেন। পৈতৃক সম্পত্তি দেখাশোনার ভার ছোট ভাই ঈশ্বরচন্দ্রকে দিয়ে তিনি নিজেকে ব্যবসায় নিয়োজিত করেন এবং এক সময় প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হন। লোকনাথ মৈত্রেয় ১৮৪৯ সালে রাজশাহীর লোকনাথ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ‘লোকনাথ দানরা’ নামে পরিচিত তাহিরপুর-বিলময় সড়ক নির্মাণ করেন। তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ‘রায় বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৮৫৪ সালে তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী দুর্গাসুন্দরী চন্দ্রনাথ মৈত্রেয়কে দত্তকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। চন্দ্রনাথ মৈত্রেয়র স্ত্রী জ্ঞানদাসুন্দরী দেবী ১৮৮৫ সালে সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রেয়কে দত্তকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রেয় এ এস্টেটের মালিক হন।
যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রেয় শিতলাই ছেড়ে পাবনা শহরে আসেন এবং ঊনিশ’শ শতকের দিকে ‘শিতলাই হাউস’ নামে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এটি একটি দ্বিতল অট্টালিকা যা সুরক্ষিত অবস্থায় বিদ্যমান। প্রায় ৩০ কক্ষবিশিষ্ট এই ইমারতটি ইন্দো-ইউরোপীয় বা উপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। বর্তমানে প্রাসাদে EDRUC নামে বাংলাদেশের একটি ড্রাগ প্রস্ত্তত ল্যাবরেটরি স্থাপিত হয়েছে। ১৯৫০ সালের পূর্ববঙ্গ জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী শীতলাই জমিদারির বিলুপ্তি ঘটে। [কাজী মোস্তাফিজুর রহমান]