শস্যের অবশিষ্টাংশ
শস্যের অবশিষ্টাংশ (Crop Residue) শস্যক্ষেতে থেকে যাওয়া সকল প্রকার শস্যের অবশেষ। মৃত্তিকা জৈব পদার্থ সমৃদ্ধকরণে শস্য অবশিষ্টাংশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূল, কান্ড, পাতা, খড় প্রভৃতি মৃত্তিকায় উলেখযোগ্য পরিমাণে জৈব পদার্থ যোগ করে। শস্যের অবশিষ্টাংশসমূহ পচে মৃত্তিকায় পরিণত হলে মৃত্তিকায় ব্যাকটেরিয়া, কেঁচো ও অন্যান্য কাংঙ্ক্ষিত অনুজীবের বৃদ্ধি ঘটে। বাংলাদেশে তিনটি ঋতুতে তিন প্রকার ধানের চাষ করা হয়: প্রাক-মৌসুম ঋতুতে আউশ ধান চাষ করা হয় এবং মৌসুম ঋতুতে তা কাটা হয়; মৌসুম ঋতুতে আমন ধান লাগিয়ে বর্ষা চলে যাওয়ার পর তা কাটা হয়; এবং শুষ্ক ঋতুতে বোরো ধানের চাষ করা হয়। ধান কাটার পর ক্ষেতে খড় অবশিষ্ট থাকে। গম, যব ও ডালজাতীয় শস্য থেকেও খড় উৎপন্ন হয়। মৃত্তিকার উপরে খড়ের একটি আবরণ থাকার ফলে একটি উলেখযোগ্য সময় পর্যন্ত মৃত্তিকায় পানি ও বায়ুর সংস্পর্শ কম থাকে, যার ফলে মৃত্তিকা গঠন সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়, মৃত্তিকায় বিদ্যমান পানির নিম্নস্তরে চলাচল বৃদ্ধি পায়, মৃত্তিকায় বায়ুজনিত ক্ষয় হ্রাস পায়, মৃত্তিকার সর্বত্র তাপমাত্রার বণ্টন সুষম হয়, বাষ্পীভবন হ্রাস পায়, কেঁচো ও অন্যান্য মৃত্তিকা অনুজীবের কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায় এবং সর্বোপরি উদ্ভিদের বর্ধন বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশে উৎপন্ন মোট শস্য অবশিষ্টাংশের মধ্যে ধান গাছ থেকে সৃষ্ট অবশিষ্টাংশই প্রায় ৭০ ভাগ। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতোই বাংলাদেশের জনগণও শস্যের অবশিষ্টাংশ নির্মাণ উপকরণ ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তবে কিছু অংশ মৃত্তিকার সমৃদ্ধকরণেও ব্যবহূত হয়। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক খড় থেকে পলিস্যাকারাইড জাতীয় অাঁঠা (polysaccharide gum) উৎপন্ন করে, যা মৃত্তিকার কণাসমূহকে দৃঢ়বদ্ধ করে এবং এর ফলে মৃত্তিকার ক্ষয় রোধ হয়। শিমজাতীয় উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ থেকে মৃত্তিকায় সবুজ সার উৎপন্ন হয়। গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে, প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ টন হারে ধানের খড় প্রয়োগ করলে বাংলাদেশের মাটিতে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তবে গো-খাদ্য, জ্বালানি এবং বিভিন্ন শিল্প প্রয়োজনে খড়ের চাহিদা থাকায় বর্ধিত মূল্য পাওয়ার আশায় কৃষকরা সাধারণত মৃত্তিকার প্রয়োজনে জমিতে খড় প্রয়োগে কম উৎসাহী হয়। [মোঃ খলিলুর রহমান]