রাজেন্দ্র কলেজ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

রাজেন্দ্র কলেজ  বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে পুরাতন কলেজ। কলেজটি ১৯১৮ সালে প্রখ্যাত কংগ্রেস নেতা অম্বিকাচরণ মজুমদারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়।

কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯১৫ সালে অম্বিকাচরণ মজুমদারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটি ফরিদপুর শহরে কলেজটি স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য ৮০ হাজার টাকার তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই কমিটি শহরের ব্যবসায়ী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। বাকী টাকা সংগ্রহের জন্য বাইশ রশির জমিদার শ্রী রমেশ চন্দ্র চৌধুরীর নিকট শরণাপন্ন হলে কলেজটি তাঁর বাবার নামে নামকরণ করার শর্তে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিতে রাজী হন। ১৯১৮ সালে ফরিদপুরের জেলা কালেক্টরের মাধ্যমে ৫.৫০ একর জমি কলেজের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই বছরের এপ্রিল মাসে ফরিদপুর জেলা কালেক্টর মি. ডনলপ কলেজ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯১৮ সালের জুন মাসে কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন কামখ্যা নাথ মিত্র। একই সময়ে দর্শন বিভাগে শিরিষ চন্দ্র সেন, গণিত বিভাগে দেবেন্দ্র নাথ দত্ত, সংস্কৃতি বিভাগে দিনেশ চন্দ্র মজুমদার, ইতিহাস বিভাগে শিশির কুমার আচার্য এবং ফজলুল হক আরবি ও ফারসি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর


১৯১৮ সালের ১ জুলাই উচ্চ মাধ্যমিক কলা বিভাগের ২৯ জন ছাত্র নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু হয়। সূচনাতে এটি ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ। ১৯২১ সালে স্নাতক, ১৯২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান, ১৯৫৩ সালে স্নাতক বিজ্ঞান এবং ১৯৬২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক বাণিজ্য শিক্ষাক্রম কোর্স প্রবর্তন করা হয়। ১৯৬৮ সালে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৭২ সালে এটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উন্নীত হয়। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞানে সম্মান শিক্ষাক্রম প্রবর্তিত হয়। পরবর্তী বছরগুলিতে বিভিন্ন বিষয়ে, যেমন গণিত, সমাজবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ইংরেজি, ব্যবস্থাপনা, সমাজকল্যাণ এবং ভূগোল, প্রাণিবিদ্যায় পর্যায়ক্রমে সম্মান শিক্ষাক্রম চালু হয়। ১৯৮৫ সালে অর্থনীতি, ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ১৯৮৮ সালে পদার্থবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও বাংলা এবং ১৯৯০ সালে গণিতে স্নাতকোত্তর শেষ পর্ব শিক্ষাক্রম প্রবর্তিত হয়। ১৯৮৮ সালে অর্থনীতি ও গণিত এবং ১৯৯৩ সালে বাংলা, ইংরেজি, ইসলামের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, হিসাববিদ্যা, ব্যবস্থাপনা, ভূগোল, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (প্রথম পর্ব) শুরু হয়। এখন ১৮টি বিষয়ে সম্মান ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে। বর্তমানে (২০১০) কলেজে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৪৫ এবং প্রায় ১৮ হাজার।

কলেজে আবাসিক সুবিধার মধ্যে রয়েছে ৬টি ছাত্রাবাস (২টি মেয়েদের ও ৪টি ছেলেদের)। কলেজের রয়েছে ২টি ক্যাম্পাস: শহর ক্যাম্পাস এবং বায়তুল আমান ক্যাম্পাস। ১৯৭২ সালে প্রধান ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বায়তুল আমান ক্যাম্পাস স্থাপিত হয়। শহর ক্যাম্পাসে ইন্টারমিডিয়েট এবং ডিগ্রি পর্যায়ের ক্লাস হয়। প্রশাসনিক কার্যক্রমও শহর কাম্পাসে হয়। অনার্স এবং মাস্টার্সের ক্লাস হয় বায়তুল আমান ক্যাম্পাসে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে কলেজের গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৮ সালের সামরিক আইন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে কলেজের ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধেও এই কলেজের ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। অনেক ছাত্র  মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং কিছুসংখ্যক ছাত্র শহীদ হন। এই কলেজের কতিপয় ছাত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন কবি জসীমউদ্দীন, লেখক নরেন্দ্রনাথ মিত্র ও নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ এস.এন.কিউ জুলফিকার আলী ও বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃণাল সেন।  [আবু সাঈদ খান]