হক, আবদুল২
হক, আবদুল২ (১৯২০-১৯৯৫) বাম রাজনীতিক এবং বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। ১৯২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি যশোর জেলার সদর থানার খড়কি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বি.এ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র ফেডারেশনের বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির সভাপতি ছিলেন।
১৯৩৯ সালে আবদুল হক কলকাতায় হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। পার্টির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যুক্ত থাকায় তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেন নি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ ফাইনাল পরীক্ষার আগেই তিনি পার্টির নির্দেশে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনে যুক্ত হন। হাটবাজারের টোল আদায় বন্ধ আন্দোলন (১৯৩৯-৪০), দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ আন্দোলন ও তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৩-৪৪) সংগঠনে তিনি বনগাঁ ও মাগুরায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার দেশের কমিউনিস্টদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে বহু কমিউনিস্ট নেতা-কর্মীর সঙ্গে তিনিও গ্রেফতার হন। ১৯৫০ সালে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে অনশন ধর্মঘটরত বিপ্লবীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে তিনি মারাত্মক আহত হন। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি ১৯৫৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হলে তিনি পিকিংপন্থি অংশে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন নিয়ে মোহাম্মদ তোয়াহার সঙ্গে তাঁর মত-পার্থক্য সৃষ্টি হলে দলটি দ্বিধাবিভক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে আবদুল হকের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত।
স্বাধীনতার পর তিনি তাঁর নেতৃত্বাধীন দলের অংশের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরও তার পার্টির নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি। ১৯৭৮ সালে এ পার্টির নতুন নামকরণ হয় বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আবদুল হক পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল ছিলেন। ১৯৯৫ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [সালেহ আতহার খান]