হাবিব, কাজী হাসান
হাবিব, কাজী হাসান (১৯৪৯-১৯৮৮) চিত্রশিল্পী। জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর যশোহর জেলার উমেদপুরে। পিতা কাজী এলহামূল হক, মাতা কাজী নুরুন্নাহার বেগম।
কাজী হাসান হাবিব স্কুলপর্বের লেখাপড়া সম্পন্ন হয় বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা ও যশোরে। যশোরে এমএম কলেজে পড়ার সময় ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকায় এসে সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৭২ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে চারুশিল্পে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
কাজী হাসান হাবিব বেঁচে ছিলেন ঊনচল্লিশ বছর। এ অল্প সময়ে তিনি তাঁর শিল্পপ্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় তাঁর তিনটি শিল্প প্রদর্শনী (১৯৮২, ১৯৮৫ ও ১৯৮৮)। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। এতে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের একুশজন কবির কবিতা নিয়ে অাঁকা তাঁর একুশটি তৈলচিত্র। এ প্রদর্শনী থেকে শিল্পীর কবিসত্তার স্বরূপ উপলব্ধি করা যায়। বোঝা যায় তাঁর কবিসত্তা ও শিল্পীসত্তার অভিন্নতা। এ ছাড়া বাংলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর একটি সরাচিত্র প্রদর্শনী (১৯৮৮)। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি আবহমান বাংলার রূপ ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন। আমাদের লোকজীবনের বিশ্বাস, অনুভব ও প্রত্যাশার সঙ্গে যুক্ত এ লোকচিত্রকলার মাধ্যমটিতে তিনি নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠিত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য যৌথ প্রদর্শনীতেও তিনি অংশ নেন। তিনি তাঁর শিল্পানুভূতিকে প্রকাশ করেন বিচিত্রভাবে। জলরঙ, তেলরঙ, অ্যাক্রেলিক, এনামেল ও প্যাস্টেল মাধ্যমে তিনি ছবি এঁকেছেন। তিনি ছাপচিত্র রচনা করেন এচিং মাধ্যমে। তিনি এঁকেছেন পোস্টার-চিত্র, রেখাচিত্রেও দেখিয়েছেন পারদর্শিতা।
কাজী হাসান হাবিব প্রচ্ছদশিল্পেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পাঁচবার (১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৬) জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। কেবল চিত্রকলায় সীমাবদ্ধ ছিল না তাঁর সৃজনশীলতা। তিনি লিখেছেন বেশ কিছু সার্থক কবিতাও। মৃত্যুর এক বছর পরে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্য-সঙ্কলন নির্বাচিত দৃষ্টির লাবণ্যে (১৯৮৯)। তিনি চিত্রে যেমন কবিতা রচনা করেন, কবিতায় তেমনি সৃষ্টি করেন চিত্র।
জীবন ও সমাজের প্রতি ছিল কাজী হাসান হাবিবের দায়বদ্ধতা। বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় তাঁর মধ্যে গভীর হয়েছে এ দায়বোধ। তাঁর কবিতা ও শিল্পে ব্যক্ত হয়েছে সমাজ চেতনার এ পরিচয়। তিনি ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমিক শিল্পী। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে রাজধানী ঢাকায়, কিন্তু তিনি ভুলতে পারেননি তাঁর শৈশবের দেখা প্রকৃতি। তাই রস সংগ্রহে তাঁর চিত্র ও কবিতা বারবার এ প্রকৃতির কাছে আনত হয়েছে।
ইতোমধ্যে কাজী হাসান হাবিব ক্যান্সার-আক্রান্ত হন। এ ব্যাধিতে ১৯৮৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। [সৈয়দ আজিজুল হক]