মিত্রমজুমদার, দক্ষিণারঞ্জন
মিত্রমজুমদার, দক্ষিণারঞ্জন (১৮৭৭-১৯৫৭) রূপকথার লেখক, শিশুসাহিত্যিক। ঢাকা জেলার সাভারের নিকটবর্তী উলাইল গ্রামে ১২৮৪ বঙ্গাব্দের (১৮৭৭) ২ বৈশাখ তাঁর জন্ম। নয় বছর বয়সে মাতৃহারা হয়ে তিনি ময়মনসিংহে পিসিমা রাজলক্ষ্মী দেবী কর্তৃক প্রতিপালিত হন। স্কুলে অধ্যয়ান্তে ২১ বছর বয়সে তিনি পিতার সঙ্গে মুর্শিদাবাদ যান। সেখানে থাকা অবস্থায়ই সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা, প্রদীপ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। পরে এফএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করে ময়মনসিংহে ফিরে তিনি পিসিমার জমিদারি দেখাশুনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ময়মনসিংহে অবস্থানকালে লোকসাহিত্যের প্রতি দক্ষিণারঞ্জনের অনুরাগ জন্মে। তিনি নানা ধরনের রূপকথা, ব্রতকথা, গীতিকথা, রসকথা ইত্যাদি সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। এ কাজে দীনেশচন্দ্র সেন তাঁকে অনুপ্রেরণা দেন।
দক্ষিণারঞ্জনের উল্লেখযোগ্য কয়েটি গ্রন্থ: ঠাকুরমার ঝুলি (১৯০৭), ঠাকুরদাদার ঝুলি (১৯০৯), ঠানদিদির থলে (১৯০৯), দাদামশায়ের থলে (১৯১৩) ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠাকুরমার ঝুলির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। জনপ্রিয় এ গ্রন্থখানি জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়। প্রথম গ্রন্থে বালকদের উপযোগী রূপকথা, দ্বিতীয় গ্রন্থে নারীদের ব্রতকথা, তৃতীয় গ্রন্থে মালঞ্চমালা, পুষ্পমালা প্রভৃতি গীতিকথা এবং চতুর্থ গ্রন্থে বৈঠকি গল্পের সংকলন প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থসমূহ পূর্ববঙ্গের পল্লী এলাকার কথাসাহিত্যকে বাংলা সাহিত্যে এক স্থায়ী আসন দান করেছে।
শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও দক্ষিণারঞ্জনের খ্যাতি আছে। খোকাবাবুর খেলা, আমাল বই, কিশোরদের মন, চারু ও হারু, ফার্স্ট বয়, লাস্ট বয়, উৎপল ও রবি, বাংলার সোনার ছেলে, সবুজ লেখা, পৃথিবীর রূপকথা (অনুবাদ), চিরদিনের রূপকথা, আমার দেশ, আশীর্বাদ ও আশীর্বাণী প্রভৃতি তাঁর শিশুবিষয়ক গ্রন্থ।
দক্ষিণারঞ্জন পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সুধা (১৯০১-১৯০৪), সারথি (১৯০৮) ও পথ (১৯৩০-৩২) নামে তিনটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। পথ ছিল বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের মুখপত্র। দক্ষিণারঞ্জন কিছুদিন ওই পরিষদের সহ-সভাপতি (১৯৩০-৩৩) ছিলেন। পরিষদের বৈজ্ঞানিক পরিভাষা-সমিতির সভাপতিরূপে তিনি বাংলায় বিজ্ঞানের অনেক পরিভাষা রচনায় কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৩৬৩ বঙ্গাব্দের (১৯৫৭) ১৬ চৈত্র কলকাতায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে। [বরুণকুমার চক্রবর্তী]