মৃত্তিকা মণিকবিদ্যা
মৃত্তিকা মণিকবিদ্যা (Soil Mineralogy) মণিক বা শিলাজাত বস্ত্তর সঙ্গে অল্প পরিমাণে জৈবপদার্থ মিশ্রিত হয়ে মৃত্তিকা গঠিত হয়। অজৈব মৃত্তিকার কঠিন দশা আয়তন ভিত্তিক ৯০% অজৈব পদার্থ এবং ১০% জৈবপদার্থ দিয়ে গঠিত। মৃত্তিকার অজৈব অংশ বেশ কিছু সংখ্যক মণিকের মিশ্রণ। মৃত্তিকার তিন প্রকার কণাতেই বিদ্যমান মণিকগুলো আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা (কখনো কখনো একটি পাললিক চক্রের মাধ্যমে) থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে উৎপন্ন। এঁটেল অংশে বিদ্যমান মণিকগুলোকে অনুসম্ভূত (secondary) মণিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব মণিক স্বল্প তাপমাত্রা বিক্রিয়া দ্বারা উৎপন্ন হয় এবং পাললিক শিলা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে মৃত্তিকা পেয়ে থাকে বা আবহবিকার বা মৃৎজনির সময় মৃত্তিকাতে উৎপন্ন হয়। মৃত্তিকার মণিক উপাদান মৃত্তিকার উর্বরতার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। মৃত্তিকায় অবস্থিত মণিকগুলোকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়, যেমন- কেলাসিত এবং অনিয়তাকার বা অকেলাসিত। মৃত্তিকার অধিকাংশ মণিকই কেলাসিত। তৎসত্ত্বেও, স্বল্প সংখ্যক মৃত্তিকাতে কিছু অনিয়তাকার মণিকও থাকে। মৃত্তিকায় বিদ্যমান অ্যালোফেন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনিয়তাকার মণিক, যা আগ্নেয় ছাই থেকে উৎপন্ন। মৃত্তিকায় অবস্থিত মণিকগুলোকে দুই প্রকারে বিভক্ত করা হয়: হালকা ও ভারি। অন্যভাবে মণিকগুলোকে তিন প্রকারে বিভক্ত করা হয়: মুখ্য, অপ্রধান ও অনুসম্ভূত।
গত শতাব্দির ষাটের দশক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন বিজ্ঞানী বাংলাদেশের মৃত্তিকার মণিক সম্পর্কে অনুশীলন করেছেন। বাংলাদেশে তিনটি বড় ভূতাত্ত্বিক গঠন বিদ্যমান। এসব গঠন হলো উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ের টারশিয়ারী পলল; মধুপুর ও বরেন্দ্র অঞ্চলের প্লাইসটোসিন সোপানের মধুপুর এঁটেল এবং পললভূমি ও মোহনা এলাকার সাম্প্রতিক পলল, যা বাংলাদেশের প্রায় ৮০% এলাকা দখল করে আছে।
টারশিয়ারী অবক্ষেপের বালিতে কোয়ার্টজের (৭০-৯০%) প্রাধান্য বিদ্যমান। অধিকাংশ স্থানে ফেল্ডস্পার (প্রধানত ক্ষার) এবং মাইকার পরিমাণ সামান্য। ভারি মণিকের পরিমাণ ৩%-এর বেশি নয়। এসব ভারি মণিকে বিভিন্ন অনুপাতে জিরকন, টরম্যালিন, কায়েনাইট, স্টোরোলাইট এবং এপিডট থাকে। সহজে অবক্ষয়যোগ্য মণিকের মোট পরিমাণ (ফেল্ডস্পার ও মাইকা) সাধারণত ১০%-এর চেয়ে কম। এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় ময়মনসিংহ ও সিলেট জেলার উত্তর সীমান্তের সন্নিকটে অবস্থিত কিছু নবীন শিলা, যাতে সাধারণ মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে ফেল্ডস্পার (১৫% পর্যন্ত) পাওয়া যায়। সহজে অবক্ষয়যোগ্য মণিকের মোট পরিমাণ কখনো কখনো ১৫%-এর বেশি থাকে, যা সাধারণত অপ্রত্যাশিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু এঁটেল মণিক বিশ্লেষণের উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, এসব মৃত্তিকাতে ক্যাওলিনাইটের প্রাধান্য সুস্পষ্ট, তবে সামান্য পরিমাণে ভারমিকুলাইট ও ইলাইট থাকে।
মধুপুর এঁটেলের বালিকণার মণিক বৈশিষ্ট্য সাধারণভাবে টারশিয়ারী অবক্ষেপের মতো। মধুপুর ও বরেন্দ্র অঞ্চলের পূর্বাংশের মৃত্তিকা মণিকগুলোর অধিকাংশ টারশিয়ারী অবক্ষেপের মণিকের মতো, অর্থাৎ বেশি পরিমাণে কোয়ার্টজ এবং তুলনামূলকভাবে স্বল্প পরিমাণে ফেল্ডস্পার ও মাইকা মণিক বিদ্যমান। টারশিয়ারী পললের মতোই ভারি মণিক অংশে জিরকন, টরম্যালিন, কায়েনাইট, স্টোরোলাইট, সিলিম্যানাইট এবং এপিডট প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। সহজে অবক্ষয়যোগ্য মণিকের পরিমাণ ৪ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে বিস্তৃত। বরেন্দ্র ভূমির পশ্চিম অর্ধাংশে সহজে অবক্ষয়যোগ্য মণিকের পরিমাণ (৮-১৪%) সামান্য বেশি এবং এ অঞ্চলে বিভিন্ন ভারি মণিকের সমাবেশ পরিলক্ষিত হয়। বরেন্দ্রভূমির দক্ষিণ অংশে কায়েনাইট, স্টোরোলাইট, সিলিম্যানাইট ও এপিডটের সঙ্গে গারনেটও থাকে। উত্তর দিকে সিলিম্যানাইটই প্রধান মণিক এবং এপিডটের পরিমাণ সামান্য। ঢাকার নিকটে অবস্থিত অবক্ষয় হয় নাই এমন মধুপুর এঁটেলের উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, এসব এঁটেলের এঁটেল মণিকে ইলাইট, ক্যাওলিনাইট এবং সামান্য পরিমাণে স্মেকটাইট বিদ্যমান। এসব আলোচনা থেকে এ উপসংহারে আসা যায় যে, মধুপুর এঁটেল ও টারশিয়ারী পাহাড়ি শিলার উৎপত্তির মধ্যে মিল রয়েছে। অধিকন্তু, মধুপুর এঁটেলে বিদ্যমান স্বল্প পরিমাণের মাইকা ও ফেল্ডস্পার সুস্পটভাবেই সংলগ্ন পললভূমি পলল থেকে ভিন্ন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পললের মণিক বৈশিষ্ট্য অতিমাত্রায় অসমসত্ত্ব, যা থেকে বুঝা যায় যে বিভিন্ন এলাকাতে বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক অবস্থায় পললগুলো অবক্ষেপিত হয়েছে: পাহাড়ের পাদদেশের নিকটে সানুদেশীয় সমভূমি (হিমালয় পর্বতসহ); নদী বিসর্প (meander) পললভূমি; মোহনাজ পললভূমি ও কটাল (tidal) পললভূমি। এসব পলল বাংলাদেশের ৮০% এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এসব পললের অবস্থা জটিল হওয়ার কারণ এই যে, নদীখাতের নিকটে নতুন পলল এখনো জমা হচ্ছে, কিন্তু অধিকাংশ পললভূমিতে কয়েক শত বছর যাবৎ সামান্য পরিমাণে পলল পড়েছে বা আদৌ কোনো নতুন পলল জমা হয়নি। অধিকন্তু, অতীতকালে বিভিন্ন সময়ে নদীগুলো এদের গতিপথ পরিবর্তন করেছে। অধিকাংশ পললভূমিতে পলিকণার পরিমাণ বেশি। এ বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও মেঘনা অবক্ষেপে দেখা যায়। হিমালয় সানুদেশীয় পুরাতন সমতলভূমি, উত্তর তিস্তা পললভূমি, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললভূমির কোনো কোনো অংশ এবং পশ্চিম গঙ্গা নদী পললভূমির মৃত্তিকা অন্তঃস্তরে বেলেময় বস্ত্ত ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। এঁটেল অবক্ষেপ গঙ্গা নদী পললভূমি, সিলেট বেসিন, আত্রাই বিল এবং নিম্ন আত্রাই বেসিন এলাকার পৃষ্ঠে ব্যাপক আকারে বিস্তৃত। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদী এবং উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ী এলাকার নদীগুলো বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক অঞ্চল থেকে পলি বহন করে আনে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পললে অধিক পরিমাণে মাইকা (মাসকোভাইট ও বায়োটাইট) থাকে। অন্যদিকে, উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি পললে মাইকার পরিমাণ অনেক কম। গঙ্গা ও নিম্ন মেঘনা পলল চুনযুক্ত। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদীর পললের বালি অংশে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফেল্ডস্পার থাকে, যার অর্ধেক ক্ষার ফেল্ডস্পার ও বাকি অর্ধেক প্ল্যাজিওক্ল্যাজ ফেল্ডস্পার এবং ৫ থেকে ১০ শতাংশ পরিমাণ মাইকা থাকে। এসব পললে ভারি মণিকের পরিমাণের পরিসর ২ থেকে ৯ শতাংশ, কিন্তু সহজে অবক্ষয়যোগ্য মণিকের পরিমাণ ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাইকার পরিমাণ কণা আকারের সঙ্গে পার্থক্য প্রদর্শন করে। কোনো কোনো পলিময় অবক্ষেপের বালি অংশে সর্বাধিক ৮০% পর্যন্ত মাইকা থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা (নদী ও মোহনাজ) পললভূমি, করতোয়া-বাঙ্গালী পললভূমির অংশবিশেষ, পটুয়াখালী জেলার দক্ষিণ অংশে সৈকতবালি অবক্ষেপে ভারী মণিক সমাবেশে অ্যাম্ফিবোলস (৪৫ থেকে ৭০ শতাংশ) এবং এপিডটের (১৫ থেকে ৩০ শতাংশ) প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। মোট মাইকার প্রায় ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশই বায়োটাইট। গঙ্গা পললে বিদ্যমান ভারি মণিক সমাবেশে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে অ্যাম্ফিবোলস (৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ) এবং অধিক পরিমাণে গারনেট (১২০ শতাংশ) থাকে। এসব পললে ডলোমাইট ও ক্যালসাইট কণাও থাকে। তিস্তা নদীর পললের ভারি মণিক অংশে বায়োটাইটের পরিমাণ অধিক (৪৫ থেকে ৭৫ শতাংশ); অন্যদিকে পুরাতন হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমিতে বায়োটাইটের পরিমাণ মাত্র ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। ব্রহ্মপুত্র নদের পললের চেয়ে তিস্তা নদীর পললে তুলনামূলকভাবে কম এপিডট এবং অধিক বায়োটাইট থাকে। এ দুটি নদীর পললে গঙ্গা-নদীর পলল থেকে অধিক পরিমাণে বায়োটাইট ও সিলিম্যানাইট বিদ্যমান। সুরমা ও অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় নদীর পলল মোটামুটিভাবে টারশিয়ারী পাহাড়ি পললের মতো। এসব পললে ফেল্ডস্পার ও মাইকার পরিমাণ কম এবং সহজে অবক্ষয়যোগ্য মণিকের পরিমাণ আনুমাণিক ১০%। সিলেট বেসিনের পললগুলোতেও অ্যাম্ফিবোলসের পরিমাণ বেশি (টারশিয়ারী পাহাড়ি পলল থেকে উৎপন্ন অধিকাংশ পললের চেয়ে ভারি মণিক অংশের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ)। একই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র পললের চেয়ে এসব পলল এপিডট (২০ থেকে ৪০ শতাংশ) ও জিরকন দ্বারাও অধিকতর সমৃদ্ধ।
পললভূমি পললের এঁটেল মণিক বৈশিষ্ট্য পাহাড়ের পলল ও মধুপুর এঁটেলের মণিক বৈশিষ্ট্য থেকে সুস্পষ্টভাবেই ভিন্ন। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পলল এবং পুরাতন মেঘনা মোহনাজ অবক্ষেপে ক্যাওলিনাইট, ইলাইট ও ক্লোরাইট মণিকের মিশ্রণ বিদ্যমান। গঙ্গা নদী পললভূমি ও নতুন মেঘনা মোহনাজ অবক্ষেপেও ক্যাওলিনাইট, ইলাইট ও ক্লোরাইট মণিক বিদ্যমান, কিন্তু এসব অবক্ষেপে তাৎপর্যপূর্ণ পরিমাণে স্পেকটাইট মণিকও থাকে। আশ্চর্যজনকভাবে রাজশাহী এলাকাতে গঙ্গা নদী ও আত্রাই পললভূমির মিলনস্থলের নিকটে অবস্থিত পললের একটি ক্ষুদ্র এলাকাতে ক্যাওলিনাইট বা স্মেকটাইট মণিকের সঙ্গে ইলাইট ও ক্লোরাইটের মিশ্রণ বিদ্যমান। মধুপুর এঁটেলে উৎপন্ন গাঢ় লাল-বাদামি সোপান মৃত্তিকা থেকে সংগৃহীত ১৬টি নমুনার এঁটেল মণিক বিশ্লেষণের উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, এসব মৃত্তিকাতে ক্যাওলিনাইটই প্রধান মণিক। ক্যাওলিনাইট ও ইলাইট একত্রে মোট মণিকের প্রায় ২০ শতাংশ এবং ভারমিকুলাইটের পরিমাণ ৫ থেকে ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশের মৃত্তিকার এঁটেল মণিক বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধানের জন্য মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট টারশিয়ারী পাহাড়ি অবক্ষেপ, মধুপুর এঁটেল, হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় পলল, মেঘনা পলল, গঙ্গা পলল, ব্রহ্মপুত্র পলল, তিস্তা পলল ও সুরমা-কুশিয়ারা পলল নামক আটটি উৎসবস্ত্ত প্রতিনিধিত্বকারী এবং পাহাড়ি ভূমি, সুনিষ্কাশিত উঁচুভূমি, অপ্রতুল নিষ্কাশিত উঁচুভূমি, অগভীরভাবে প্লাবিতভূমি ও গভীরভাবে প্লাবিতভূমি এ পাঁচটি পানি অবস্থার মৃত্তিকা থেকে ২২৮টি মৃত্তিকা নমুনা (মিশ্র, পৃষ্ঠমৃত্তিকা, অন্তর্মৃত্তিকা ও অন্তঃস্তর) সংগ্রহ করেছিল। অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত ফলাফল এ ইঙ্গিত প্রদান করে যে, মিশ্র নমুনাগুলোতে মধ্যম থেকে অধিক পরিমাণে (মোট মণিকের ২০ থেকে ৬০ শতাংশ) ক্যাওলিনাইট ও ইলাইট ছিল। একই ধরনের ফলাফল পৃষ্ঠমৃত্তিকা, অন্তর্মৃত্তিকা ও অন্তঃস্তরের ক্ষেত্রেও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু টারশিয়ারী পাহাড়ের তিনটি মৃত্তিকাতে তুলনামূলকভাবে অল্প পরিমাণের (৫ থেকে ২০ শতাংশ) ইলাইট এবং ৬০ শতাংশেরও অধিক পরিমাণে ক্যাওলিনাইট মণিক ছিল। প্রায় সব কয়টি মৃত্তিকাতে গভীরতা নির্বিশেষে ক্লোরাইট ও ভারমিকুলাইটের পরিমাণ ছিল নগণ্য থেকে সামান্য। মধুপুর এঁটেলে উৎপন্ন মৃত্তিকা পরিলেখসমূহের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ক্যাওলিনাইট ও ইলাইট মণিক প্রায় সমান অনুপাতে বিদ্যমান। ক্লোরাইট মণিকের পরিমাণ তিস্তা পলল মৃত্তিকাতে সামান্য (৫ থেকে ২০ শতাংশ), কিন্তু বাংলাদেশের অন্যান্য মৃত্তিকাতে এর পরিমাণ নগণ্য। গাঙ্গেয় পললে সামান্য পরিমাণে (৫ থেকে ২০ শতাংশ) স্মেকটাইট থাকে, অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্যান্য মৃত্তিকাতে নগণ্য পরিমাণে বা আদৌ কোনো স্মেকটাইট থাকে না। এসব মৃত্তিকায় বালিতে ৭০ শতাংশেরও অধিক পরিমাণে কোয়ার্টজ থাকে। বালি অংশে বিদ্যমান পটাশিয়াম সংবলিত মণিকগুলোর অধিকাংশই ফেল্ডস্পার ও মাইকা। টারশিয়ারী পাহাড় ও মধুপুর এঁটেল মৃত্তিকার বালি অংশে ৫ শতাংশেরও কম পরিমাণ ফেল্ডস্পার ও মাইকা থাকে। পললভূমি এলাকাতে মেঘনা পললভূমি অন্যান্য পললভূমির পললের চেয়ে পটাশিয়াম সংবলিত মণিক (ফেল্ডস্পার ও মাইকা) সমৃদ্ধ। ব্রহ্মপুত্র পললের বালি অংশে সমান অনুপাতে অর্থোক্ল্যাজ ও প্লাজিওক্ল্যাজ ফেল্ডস্পার থাকে, কিন্তু হিমালয় পর্বত সানুদেশীয় সমতলভূমি, গাঙ্গেয় পললভূমি, তিস্তা পললভূমি ও সুরমা-কুশিয়ারা পললভূমিতে অর্থোক্ল্যাজের প্রাধান্য বিদ্যমান। পললভূমি মৃত্তিকাতে মৃৎজনি (pedogenesis) দ্বারা এঁটেল মণিক উপাদানে কোন প্রকার পরিবর্তনের সামান্যতম প্রমাণ পাওয়া যায় না, অবশ্য এর কিছু ব্যতিক্রমও আছে। কোন কোন চুনহীন পুরাতন মৃত্তিকার পৃষ্ঠমৃত্তিকাতে ফেরোলাইসিস বিক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু আদি এঁটেল মণিক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে অনিয়তাকার সিলিকা-অ্যালুমিনা-আয়রন জেল তৈরি হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। ফেরোলাইসিস দ্বারা ব্যাপক পরিবর্তন মধুপুর এঁটেলে উৎপন্ন গভীর ও অগভীর ধূসর সোপান মৃত্তিকা উৎপত্তির সময় সংঘটিত হয়েছে। তৎসত্ত্বেও, কৃষিকাজে যখন মৃত্তিকা ব্যবহার করা হয় তখন বাংলাদেশের কোন কোন মৃত্তিকাতে সমস্যা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, জেরোসাইট মণিকে (বিশেষ করে যখন জারিত হয়) বিদ্যমান সালফারের উপস্থিতির কারণে এসিড সালফেট মৃত্তিকাতে অম্লতা সৃষ্টি এবং চুন ও স্মেকটাইট মণিকের উপস্থিতির কারণে গাঙ্গেয় পললভূমি মৃত্তিকাতে ক্ষারত্বের সৃষ্টি। বাংলাদেশের পললভূমি মৃত্তিকার প্রাথমিক ধাপে সর্বাধিক ৪০ শতাংশের মতো অবক্ষয়যোগ্য মণিক থাকে। গাঙ্গেয় পললভূমি এবং সোপান ও পাহাড়ের লাল ল্যাটিরাইটীয় মৃত্তিকা অধিক পরিমাণে ফসফেট বন্ধন করে। মোনাজাইট নামক তেজস্ক্রিয় ক্ষতিকর মণিক কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের কালো বালিতে পাওয়া গিয়েছিল। [আমিনুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ সুলতান হোসেন]