মহেশপুর উপজেলা
মহেশপুর উপজেলা (ঝিনাইদহ জেলা) আয়তন: ৪০৫.৪৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৩´ থেকে ২৩°২৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪২´ থেকে ৮৯°০২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে জীবননগর এবং কোটচাঁদপুর উপজেলা, দক্ষিণে চৌগাছা উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে চৌগাছা উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
জনসংখ্যা ২৯৬২৪৮; পুরুষ ১৫২০৫৮, মহিলা ১৪৪১৯০। মুসলিম ২৮৪০২৯, হিন্দু ১২০৪৮, বৌদ্ধ ৯৫ এবং অন্যান্য ৭৮।
জলাশয় প্রধান নদী: ইছামতি, কোদলা, বেতনা. ভৈরব। উখড়ি বিল, বড় বিল, ডুবলি বিল, কাঠগাড়ার বিল, পূর্বপাড়ার বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন মহেশপুর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১২ | ১৫০ | ১৯৬ | ২৩১০০ | ২৭৩১৪৮ | ৭৩১ | ৫০.৫ | ৪৩.১ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
২১.৩৪ | ৯ | ১৬ | ২৩১০০ | ২০১৪ | ৫০.৫ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
আজমপুর ১০ | ৭৯৩৫ | ১০৬৯১ | ৯৯৩৪ | ৪৫.৫১ |
এস.কে.বি (সুন্দরপুর) ৮৩ | ৫৬৩৯ | ৭৯৮৯ | ৭৫০৬ | ৫০.৬৭ |
কাজিরবেড় ২৯ | ৮৭৫৬ | ১৫১৩৫ | ১৪৪৯৮ | ৩৬.৯৯ |
নটিমা ৫৩ | ৯২৮১ | ১১৭১৩ | ১১০৪৯ | ৪৩.০৬ |
নেপা ৫৯ | ৮৪৮৬ | ১৩২৪০ | ১২৫৬৭ | ৪১.৭০ |
পান্থপাড়া ৬৫ | ৮৪৮৫ | ৮৭৩৬ | ৮৩৩৬ | ৪৪.৩২ |
ফতেহপুর ১৭ | ৭৪০৪ | ১১০৯৬ | ১০৪৭৮ | ৪৮.৫৭ |
বাঁশবাড়িয়া ১১ | ৯১৫৯ | ১৩৮৬৭ | ১৩২৫৫ | ৩৯.৫৭ |
মান্দারবাড়ি ৩৫ | ৭২৫০ | ১৩০১৬ | ১২২১৯ | ৫০.৬৭ |
যাদবপুর ২৩ | ৯৬৬৪ | ১২৮০১ | ১২৪৩৯ | ৪২.৭৭ |
শ্যামকুড় ৭৭ | ৮৩১০ | ১১৯৫০ | ১১২৭৩ | ৩৮.৫৬ |
স্বরূপপুর ৮৯ | ৮০২৫ | ৯৯৫৫ | ৯৪০৫ | ৩৮.৩৮ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বুড়ো শিব (মহেশ্বর) মন্দির, রাজবল্লভ মন্দির, সুন্দরপুর জমিদার বাড়ি, খালিশপুরের নীলকুঠি, ভালাই শাহের মাযার ও শ্রীপাট মন্দির।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে এ উপজেলার হুশোরখালি, বাবুর বাগান, উজ্জলপুর, যাদবপুর, দত্তনগর ও পুড়োপাড়া নামক স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। হুশোরখালির লড়াইয়ে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন ও ১ জন পাকসেনাদের হাতে বন্দী হন। দত্তনগরে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন এবং কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১ (সাহেব দাড়ি); স্মৃতিস্তম্ভ ১ (মহেশপুর হাইস্কুল মাঠ)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৫০, মন্দির ৩০। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মহেশপুর জামে মসজিদ, শিব মন্দির, শ্রীপাট মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৭%; পুরুষ ৪৭.০%, মহিলা ৪০.১%। কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৪, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২৩, মাদ্রাসা ২৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মহেশপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৫), মহেশপুর হাইস্কুল (১৮৬৩), খালিশপুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৬৯), মহেশপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯৭৬), বৈচিতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯২২), নটিমা সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৭৪)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সীমান্ত বাণী (সাপ্তাহিক), চেতনা, ক্ষণকাল (সাময়িকী)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, সিনেমা হল ৩, ক্লাব ২৫, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ৫, প্রেসক্লাব ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৪.৭৯%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪৯%, ব্যবসা ১২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.২৬%, চাকরি ২.৭১%, নির্মাণ ০.৫৮%, ধর্মীয় সেবা ০.০৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৮% এবং অন্যান্য ৪.৮%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৬৪%, ভূমিহীন ৪২.৩৬%। শহরে ৪৫.২২% এবং গ্রামে ৫৮.৬৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, তুলা, পাট, বাদাম, পিঁয়াজ, রসুন, টমেটো, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি যব, খেসারি, ছোলা, অড়হর।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, কলা, জাম, পেঁপে, নারিকেল, জামরুল, তরমুজ, খেজুর।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ২১, হাঁস-মুরগি ৪৬।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৭ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৩৬৪ কিমি; নৌপথ ৪ নটিক্যাল মাইল।
শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, কাঠ ও বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৩, মেলা ৩। খালিশপুর, পুড়াপাড়া, তালসা, শ্যামকুড়, জিন্নানগর, ভৈরবা, সামন্তা ও বেলেমাঠ। ফতেহপুরের বৈশাখী মেলা এবং মহেশপুরের দুর্গাপুজার মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য শাকসবজি, কলা, কাঁঠাল, খেজুর গুড়, আলু।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৩.৬৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৩১%, পুকুর ০.১৩%, ট্যাপ ১.১০% এবং অন্যান্য ৩.৪৬%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১০.৭৮% (গ্রামে ১০.১০% ও শহরে ১৮.৮১%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৫.০২% (গ্রামে ৫৪.৭৮% ও শহরে ৫৭.৯৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৪.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ১১, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩৬, ক্লিনিক ৮, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৩।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ২০০০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পাহাড়ী ঢলে এই অঞ্চল প্লাবিত হয়ে কাঁচা ও আধা-পাকা ঘরবাড়ি এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, সৃজনী, জাগরণী চক্র।
[নাসির উদ্দিন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মহেশপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।