মাহবুব, কাজী গোলাম
মাহবুব, কাজী গোলাম (১৯২৭-২০০৬) ভাষা আন্দোলনের নেতা, রাজনীতিক। ১৯২৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা কাজী আবদুল মজিদ এবং মাতা আছিয়া খাতুন। ছাত্রজীবন থেকেই গোলাম মাহবুব সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত হন। তিনি ১৯৪২ সাল থেকে পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি ১৯৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর গোলাম মাহবুব ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এম.এ শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি সে সময়ের প্রগতিশীল ছাত্র-যুবক ও রাজনৈতিক কর্মীদের সংগঠন ওয়ার্কার্স ক্যাম্পে যোগ দেন। এ সময়ে তিনি পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ সংগঠনের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনেও নিজেকে যুক্ত করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে ৪ জানুয়ারি ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৪৮ সালে ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে হরতাল পালনকালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবি আদায়ের ধর্মঘট সংগঠনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এ সময়ে তিনি দুমাসেরও বেশি সময় কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি ১৯৫২ সালে গ্রেফতার হন এবং এক বছর কারাবরণ করেন।
গোলাম মাহবুব ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫৩ সালে বৃহত্তর বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফার আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনসহ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের পথে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। গোলাম মাহবুব ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের বিরোধিতা করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন এবং এ দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং রাজনৈতিক গবেষণা কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৩-৯৪ সালে কাজী গোলাম মাহবুব বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এ সময়ে তাঁর নেতৃত্বে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে সরকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করে হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
কাজী গোলাম মাহবুব ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৯৩ সালে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম রাষ্ট্রভাষা স্বর্ণপদক, ১৯৯৮ সালে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট পদক, ২০০০ সালে তমদ্দুন মজলিশের মাতৃভাষা পদক, ২০০২ সালে একুশে পদক এবং একই বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাষা সৈনিক পদকে ভূষিত হন। ২০০৬ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন তাঁর নামে ধানমন্ডির ১০নং সড়কের নামকরণ করেছে ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব সড়ক। [এম.আর মাহবুব]