রত্ন পরীাগার
রত্ন পরীক্ষাগার (Gem Testing Laboratory) পল কাটা ও পালিশকৃত মূল্যবান রত্ন পরীক্ষা ও বিশুদ্ধতা যাচাই করার পরীক্ষাগার। রত্নের সহজাত রং দেখে অভিজ্ঞ জহুরি বলে দিতে পারেন রত্নটি কোন জাতের। হীরার দ্যুতি ও সূক্ষ্মতা, নীলা, চুনি, পান্নার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রং ইত্যাদি দেখে তারা অনেক কিছু বলে দিতে পারেন এবং আগেকার দিনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নির্ভুল হতেন। অবশ্য উনিশ শতকের শুরুতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে কৃত্রিম মণিরত্নের সফল বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। তাই বর্তমান কালে কৃত্রিম নকল সামগ্রীর ভিড়ে মণিরত্ন যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং এখন একমাত্র বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমেই নিখুঁত যাচাই সম্ভব। এ কারণেই সারা বিশ্বে প্রাকৃতিক, কৃত্রিম ও নকল মণিরত্ন পরীক্ষা ও যাচাইয়ের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে থাকে। শিল্পোন্নত দেশগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ১৯৯২ সালে মণিরত্ন পরীক্ষার জন্য প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার স্থাপিত হয়। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা জেম টেস্টিং ল্যাবরেটরিটি বিখ্যাত জার্মান কোম্পানি System Eichorst-এর সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত। এগুলির মধ্যে রয়েছে রত্ন ও পাথর পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত মাইক্রোসকোপ, রত্নের দ্যুতি সংক্রান্ত গুণাগুণ নির্ধারণ করার পোলারিস্কোপ (polariscope), আলোর প্রতিসরণ পরিমাপের জন্য রিফ্র্যাকটোমিটার (refractometer), একটি বর্ণালিবীক্ষণ, লং ও শর্ট ওয়েভের অতি বেগুনি রশ্মির বাতি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। একজন অভিজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদ জেম টেস্টিং ল্যাবরেটরির সার্বিক কার্যাবলি তত্ত্বাবধান করে থাকেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সকল মহার্ঘ্য ও দামি রত্ন-পাথর (মুক্তা ও প্রবাল ছাড়া) মূলত পলকাটা ও পালিশকৃত ভূতাত্ত্বিক উৎসজাত খনিজ পদার্থ। রত্ন সামগ্রী ল্যাবরেটরিতে অবিনাশক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করার নিমিত্তে হাল্কা রশ্মি ব্যবহার করা হয়।
এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার আসল উদ্দেশ্য খুব কম মূল্যের বা একেবারে মূল্যহীন কৃত্রিম ও নকল পাথরের অজস্র ভিড়ে সৌন্দর্যমন্ডিত ও ব্যাপক আর্থিক মূল্য আছে এমন প্রাকৃতিক উৎসজাত আসল রত্ন-পাথর চিহ্নিত ও পৃথকীকরণ করা। জেম টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে জনসাধারণকে রত্ন পরীক্ষা পরিষেবা প্রদান করে আসছে। এটি ঢাকার বনানীস্থ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর ইকবাল সেন্টারে অবস্থিত।
[আরিফ মহিউদ্দিন শিকদার]