মাইকেল মধুসূদন কলেজ
মাইকেল মধুসূদন কলেজ প্রতিষ্ঠা ১৯৪১ সালে। মাইকেল মধুসুদন কলেজ সংক্ষেপে এম.এম কলেজ নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ১৯৪০ সালের আগস্ট মাসে মহিতোষ রায় চৌধুরীর উদ্যোগে যশোর শহরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এক সভা হয়। এ সভায় রায়বাহাদুর শ্রী কেশবলাল চৌধুরী, যশোর পৌরসভার সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ হালদার ও তৎকালীন জেলা জজ এস.কে গুপ্তের উপস্থিতিতে ক্ষিতিনাথ ঘোষকে সম্পাদক করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট এক কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৪১ সালের জুলাই মাসে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে এবং যশোর শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন তৎকালীন মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের দুটি ভবনে কলেজের আনুষ্ঠানিক শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। এসময়ে কলেজের নাম ছিল ‘যশোর কলেজ’।
কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ড. ধীরেন্দ্রনাথ কর। ১৯৪১-৪২ শিক্ষাবর্ষে এ কলেজে ছিল ১৪২ জন ছাত্র ও ৪ জন ছাত্রী। এর মধ্যে হিন্দু ছাত্র ১০৯ ও মুসলিম ৩৭ জন। হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রদের জন্য দুটি আলাদা ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এ কলেজকে মিত্রবাহিনী একটি নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে। শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য আপন ক্যাম্পাস ফেলে কলেজটি হাটবাড়িয়ার জমিদারের কাচারিতে (বর্তমান ফায়ার ব্রিগেডের পাশে) স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৫ সালে কলেজটি পূর্বের জায়গায় প্রত্যাবর্তন করে এবং তখন এর নামকরণ করা হয় ‘মাইকেল মধুসূদন কলেজ’। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের ফলে কলেজটি আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ.এস নোমানী কলেজের আর্থিক সঙ্কট দূর করার ব্যবস্থা করেন।
১৯৫০-এর দশকে কলেজটিতে বি.কম (পাস) ও বি.এসসি (পাস) কোর্স প্রবর্তন করা হয়। ১৯৫৯ সালে ক্যাম্পাস বর্ধিতকরণের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিট্রেট এম রুহুল কুদ্দুস-এর সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড থেকে বর্তমান অবস্থানে (খড়কী মৌজায়) কলেজটি স্থানান্তর করা হয়। ১৯৬২ সালে বাংলা, অর্থনীতি ও ভূগোল বিষয়ে অনার্স কোর্স প্রবর্তিত হয়। ১৯৬৮ সালের ১ মে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষে পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, গণিত, রসায়ন, ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান-এ অনার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৯২-৯৩ সালে মাস্টার্স কোর্স (প্রথম পর্ব) এবং ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স কোর্স (শেষ পর্ব) খোলা হয়। ইংরেজি অনার্স কোর্স চালু হয় ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে।
১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী শিক্ষা ও প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলা হয়। বর্তমানে অনার্স কোর্স রয়েছে ১৭টি বিষয়ে। মাস্টার্স কোর্স রয়েছে ১৬টি বিষয়ে।
কলেজে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১৬৭ জন। ২০১০ সালে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৪,০০০ ও নিয়মিত ও অনিয়মিত কর্মরত কর্মচারী সংখ্যা ১০১ জন। কলেজের ১৭টি বিভাগে সেমিনার লাইব্রেরি (বিভাগীয় লাইব্রেরি) গড়ে উঠেছে। এই সকল বিভাগীয় লাইব্রেরির প্রত্যেকটিতে এক হাজারের অধিক গ্রন্থ রয়েছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ২৫,০০০। খেলার মাঠ, শহীদ মিনার, মসজিদ, ২টি পুকুর এবং ৪টি হোস্টেল (ছাত্রদের ২, ছাত্রীদের ২), কলাভবন, পুরনো বিজ্ঞান ভবন, নতুন বিজ্ঞান ভবন, বাণিজ্য ভবন, অধ্যক্ষের বাসভবন, হোস্টেল সুপারের বাসভবন, শিক্ষকদের রেস্ট হাউস, কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন, ছাত্র কমনরুম, ছাত্রী কমনরুম, পোস্ট অফিস, শিক্ষক ডরমেটরি (পরিত্যক্ত) ও একটি ক্যান্টিন নিয়ে ২২.১৮ একর জমির উপর এম.এম কলেজ প্রতিষ্ঠিত।
এম.এম কলেজে বিএনসিসি (বিমান শাখা), বিএনসিসি (বিমান মহিলা শাখা), বিএনসিসি (সেনা শাখা), রোভার স্কাউটস, রোভার-ইন-গার্ল, রেঞ্জার, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বিজ্ঞান ক্লাব রয়েছে। সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী, বিবর্তন ও উচ্চারণ নিয়মিত সংস্কৃতিচর্চা করে চলেছে। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য শহীদ মিনার সংলগ্ন মুক্তমঞ্চ নামে একটি উম্মুক্ত মঞ্চ রয়েছে। এছাড়া কলেজে বাঁধন-এর স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তসংগ্রহ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে চলেছে। ১৯৭১ সালে কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। [আমজাদ হোসেন]