ভীমের জাঙ্গাল
ভীমের জাঙ্গাল প্রাচীন বা মধ্য যুগের প্রথম দিকে উত্তর বাংলার বরেন্দ্র অঞ্চলে নির্মিত একটি সড়ক ও বাঁধ। এর বিদ্যমান ধ্বংসাবশেষ সিরাজগঞ্জের সীমানার কাছাকাছি থেকে উত্তর-পশ্চিমে শেরপুর অতিক্রম করে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীর ধরে বগুড়া শহরের প্রান্ত ঘেঁষে আরও উত্তর দিকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার গিয়ে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার দামুকদহের বিলে মিশেছে। পরে তা দিনাজপুর জেলার বিরাটনগর ও ঘোড়াঘাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। অনেকের মতে, এই জাঙ্গাল ঘোড়াঘাট থেকে উত্তরে নীলফামারী জেলার ডোমার পর্যন্ত, আবার কারও কারও মতে, ঘোড়াঘাট থেকে পূর্বে আসামের কামরূপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
কোন কোন স্থানে এই জাঙ্গাল ১২ মিটার উঁচু ও ৬ মিটার চওড়া। এর উৎপত্তি বা নির্মাণের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। তবে অনুমিত হয়, বহিঃশত্রুর সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে ইতালির বৃত্তাকার দুর্গের মতো প্রতিরক্ষাব্যূহ হিসেবে এই জাঙ্গাল নির্মিত হয়েছিল। এছাড়াও প্রতি বছর বন্যাপ্লাবিত এই অঞ্চলে প্রাচীন সড়ক হিসেবেও সম্ভবত এটি ব্যবহূত হতো।
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, ভীমের জাঙ্গাল নির্মাণ করেন ভীম নামে এক রাজা যাঁর পরিচয় অজ্ঞাত। তবে অনেকের মতে, তিনি দ্বিতীয় পান্ডব ভীম কিংবা ভগীরথ রাজবংশের অনঙ্গভীম, গজভীম ও রণভীম, এঁদের কোন একজনের সঙ্গে অভিন্ন হতে পারেন। আবার অন্যদের মতে, তিনি ছিলেন বারো শতকের রাজা ভীম, যাঁর পিতৃব্য কৈবর্ত-প্রধান দিব্য পাল রাজবংশের দ্বিতীয় মহীপালএর কাছ থেকে বরেন্দ্র জয় করেছিলেন। দিব্যের (দিব্যোক) পর সিংহাসনে বসেন তাঁর ভাই রুদক এবং রুদকের পর রাজা হন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ভীম। তিনি পালবংশীয় রাজা রামপাল কর্তৃক পরাজিত ও নিহত হন। এরূপ বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে, সম্ভাব্য পাল আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাব্যূহ হিসেবে এই ভীমই জাঙ্গালটি নির্মাণ করেন। তবে এই জনশ্রুতি স্বীকৃত তথ্য দ্বারা প্রমাণ সাপেক্ষ। [মোহাম্মদ আইয়ুব খান]