মে দিবস
মে দিবস আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস (১ মে)। ১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগোর রাস্তায় সংঘটিত ঘটনা ও পরবর্তী ঘটনাবলি থেকে এই দিবসের উৎপত্তি। আট ঘণ্টার শ্রমদিবস, মজুরি বৃদ্ধি, কাজের উন্নততর পরিবেশ ইত্যাদি দাবিতে ১ মে একটি শ্রমিক সংগঠন শিল্প ধর্মঘটের ডাক দেয়। বর্বর পন্থায় সে ধর্মঘট দমন করা হয়। ৩ মে ধর্মঘটি শ্রমিকদের এক প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলিবর্ষণে ৬ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। এর ফলস্বরূপ পরদিন হে মার্কেটে শ্রমিকরা প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হলে কারখানার মালিকরা সেখানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং তাতে ৪ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। ধর্মঘট সংঘটিত করার দায়ে অগাস্ট স্পাইস নামে এক শ্রমিক নেতাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কংগ্রেসে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষিত হয় এবং তখন থেকে অনেক দেশে দিনটি শ্রমিক শ্রেণি কর্তৃক উদ্যাপিত হয়ে আসছে। রাশিয়ায় এবং পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হবার পর মে দিবস এক বিশেষ তাৎপর্য অর্জন করে। জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (International Labour Organisation, ILO) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের অধিকারসমূহ স্বীকৃতি লাভ করে। আইএলও কতগুলি নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করে এবং সকল দেশে শিল্পমালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহবান জানায় এবং এভাবে শ্রমিক ও মালিকদের অধিকার সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ আইএলও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালায় স্বাক্ষরকারী একটি দেশ।
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রমিক শ্রেণির প্রাধান্যের কারণে অধিকাংশ সমাজতান্ত্রিক দেশে বেশ গুরুত্ব ও সংকল্প সহকারে মে দিবস পালন করা হয়। কিন্তু সকল সমাজতান্ত্রিক দেশে দিনটি সাধারণ ছুটি হিসেবে পালিত হয় না। অল্প কিছুসংখ্যক অ-সমাজতান্ত্রিক দেশে মে দিবসে সাধারণ ছুটি পালিত হয়, বাংলাদেশ সেদেশগুলির অন্যতম, যদিও এদেশের শ্রমিকদের মাত্র ১৫ শতাংশ শহুরে-শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট শ্রম মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বাণী দিয়ে থাকেন। শিকাগোর মে মাসের ঘটনা পুনর্ব্যক্ত করে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, মে দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য সংবাদপত্রগুলি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। মাথায় রঙ-বেরঙের কাপড় বেঁধে নানা রঙের ফেস্টুনসহ শ্রমিকরা মিছিল-শোভাযাত্রা বের করে, বেতার-টেলিভিশনে আলোচনার ব্যবস্থা থাকে এবং পত্র-পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সমাজতান্ত্রিক নয় এমন দেশের জন্য এটি একটি অসাধারণ ব্যাপার যে, বাংলাদেশে সাধারণভাবে সরকারের পক্ষ থেকেই এসকল কর্মকান্ডের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই দিনে শ্রমিকরা মিছিল-সমাবেশের আয়োজন করে তাদের ক্ষোভ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং অতীতের সংগ্রামে তাদের অর্জিত বিজয় উদ্যাপনের জন্য। [সিরাজুল ইসলাম]