ভট্টাচার্য, গদাধর
ভট্টাচার্য, গদাধর (১৬০৪-১৭০৯) সংস্কৃত পন্ডিত ও নৈয়ায়িক। পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে তাঁর জন্ম। পিতা জীবাচার্য ছিলেন একজন বামাচারী তান্ত্রিক। গদাধর শিরোমণি-উত্তর যুগের নব্যন্যায়ে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। রঘুনাথ শিরোমণি গ্রন্থে গদাধর রচিত তিনটি বিখ্যাত টীকা হলো: অনুমানদীধিতিটীকা, নঞ্বাদব্যাখ্যা ও বৌদ্ধাধিকারদীধিতিটীকা। মূল তত্ত্বচিন্তামণির শব্দ ও অনুমান খন্ডের ওপর গদাধর রচিত টীকার অংশমাত্র পাওয়া গেছে। পক্ষধরমিশ্রের আলোক-এর ওপর গদাধরের শব্দমণ্যালোকটীকা, প্রত্যক্ষালোকটীকা ও অনুমানালোকটীকারও অংশমাত্র আছে। তাঁর কুসুমাঞ্জলিটীকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এ টীকাগুলি তখনকার দিনে ন্যায়চর্চার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করত, কারণ সে সময়ে টীকা ছাড়া কোনো মূলগ্রন্থের তত্ত্বোদ্ধার সম্ভব হতো না। তাই টীকাগ্রন্থগুলিও অনেকাংশে মূল গ্রন্থের মর্যাদা পেত।
গদাধর রচিত টীকাগুলি সাধারণভাবে গদাধরী টীকা বা সংক্ষেপে গাদাধরী নামেও পরিচিত ছিল। কথিত হয় যে, গদাধর এগুলি ছাড়া ৬৪খানা বাদগ্রন্থও (তর্কবিদ্যা-সংক্রান্ত গ্রন্থ) রচনা করেছিলেন। তন্মধ্যে শক্তিবাদ, মুক্তিবাদ, ব্যুৎপত্তিবাদ, বিষয়তাবাদ ও বিধিস্বরূপ গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয়েছে। তাঁর গ্রন্থের প্রভাবে পূর্ববর্তী নৈয়ায়িক জগদীশ তর্কালঙ্কার এবং ভবানন্দের অনেক গ্রন্থ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
গদাধরের গ্রন্থগুলি ১৬৪০-৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত বলে অনুমান করা হয়। তাঁর গুরু ছিলেন হরিরাম তর্কবাগীশ। গুরু-শিষ্যের পান্ডিত্যপূর্ণ সস্পর্ক নিয়ে তৎকালীন নবদ্বীপে অনেক প্রবাদ প্রচলিত ছিল। গদাধরের সময় রাজা রুদ্র রায়ের রাজত্বকালে নবদ্বীপের ছাত্রসংখ্যা ছিল প্রায় ৪,০০০ এবং শিক্ষক ৫৫০ জন। তখনকার দিনে শিক্ষাক্ষেত্রে গদাধরের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। নব্যন্যায়ের ইতিহাসে তৃতীয় ও শেষ ধারার বিখ্যাত পন্ডিত ছিলেন গদাধর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ ধারার অবসান ঘটে। [সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]