সৎসঙ্গ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সৎসঙ্গ জনকল্যাণমূলক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। পাবনা জেলার হিমাইতপুর গ্রামে এর কেন্দ্রীয় আশ্রম অবস্থিত। এর প্রতিষ্ঠাতা হিমাইতপুর নিবাসী শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র (১৮৮৮-১৯৬৯)। মানুষের মধ্যে প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারলেই যথার্থ কল্যাণ সাধন সম্ভব এই অনুভব থেকেই অনুকূলচন্দ্রের জীবনে সৎসঙ্গ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

‘সৎসঙ্গ’ নামে একটি সংগঠন ভারতের আগ্রার দয়ালবাগ নামক স্থানে পূর্ব থেকেই বিদ্যমান ছিল। রামানন্দ (১৪০০-১৪৭০),  নানক (১৪৬৯-১৫৮১), কবীর (১৪৯৮-১৫৪৮), দাদু (১৫৪৪-১৬০৩) প্রমুখ সাধক বাহ্য আনুষ্ঠানিকতা বর্জিত অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী মরমিয়া ধর্মসাধনার যে ধারা প্রবর্তন করেন, আঠারো-উনিশ শতকের দয়ালবাগ সৎসঙ্গ ছিল তারই নব রূপায়ণ। এর প্রতিষ্ঠাতা স্বামীজি মহারাজের শিষ্য হুজুর মহারাজ ছিলেন অনুকূলচন্দ্রের জননী মনোমোহিনী দেবীর গুরু। অনুকূলচন্দ্র জননীর নিকটেই দীক্ষা লাভ করে তাঁর সহায়তায় সৎসঙ্গ আন্দোলন গড়ে তোলেন।

সৎসঙ্গ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের একটি মিলনক্ষেত্র। ১৯৫২ সালে এটি নিবন্ধীকৃত হয়ে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। মনোমোহিনী দেবী ছিলেন সৎসঙ্গ পরিষদের প্রথম সভানেত্রী। ‘অন্যে বাঁচায় নিজে থাকে। ধর্ম বলে জানিস তাকে\’ অনুকূলচন্দ্রের এই বাণীর আলোকে ধর্ম ও কর্মের সমন্বয়ে হিমাইতপুরের সৎসঙ্গ আশ্রমে আদর্শ শিক্ষাকেন্দ্র ‘তপোবন’, ‘মনোমোহিনী কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, ‘বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্র’, ‘সৎসঙ্গ কেমিক্যাল ওয়ার্কস’, ‘মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’, ‘সৎসঙ্গ প্রেস অ্যান্ড পাবলিশিং হাউজ’, ‘সৎসঙ্গ দাতব্য চিকিৎসালয়’, ‘কলাকেন্দ্র’, ‘মাতৃবিদ্যালয়’, ‘কুটিরশিল্প কেন্দ্র’, ‘সৎসঙ্গ কৃষি খামার’, সর্বসাধারণের জন্য ভোজনাগার ‘আনন্দবাজার’ ইত্যাদি গড়ে ওঠে। দেশবন্ধু  চিত্তরঞ্জন দাশ, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী  সুভাষচন্দ্র বসু, শেরে বাংলা  .কে ফজলুল হক প্রমুখ রাজনৈতিক নেতা এবং দেশবিদেশের গুণিজন সৎসঙ্গ পরিদর্শন করে এর অসাম্প্রদায়িক ও মানবসেবামূলক কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন।

১৯৪৬ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে অনুকূলচন্দ্র বিহার রাজ্যের দেওঘর চলে যান। পরের বছর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটলে তিনি আর ফিরে আসেননি; সেখানেই সৎসঙ্গের আশ্রম গড়ে তোলেন। ফলে হিমাইতপুরের আশ্রম দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার হুকুম দখল করে এ আশ্রমে মানসিক হাসপাতাল স্থাপন করে। বর্তমানে মূল আশ্রমসংলগ্ন ভূমিতে সৎসঙ্গ আশ্রম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যশোর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা প্রভৃতি জেলাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সৎসঙ্গের শাখা আশ্রম রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং পাশ্চাত্যেও এর কর্মধারা প্রসারিত। বর্তমানে অনুকূলচন্দ্রের জন্মভূমি হিমাইতপুর সৎসঙ্গীদের নিকট পরমতীর্থ বলে গণ্য হয়।  [রবীন্দ্রনাথ সরকার]