সাভার উপজেলা
সাভার উপজেলা (ঢাকা জেলা) আয়তন: ২৮০.১২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৪´ থেকে ২৪°০২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১১´ থেকে ৯০°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কালিয়াকৈর ও গাজীপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে কেরানীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুস সালাম, শাহ আলী, পল্লবী ও তুরাগ থানা, পশ্চিমে ধামরাই ও সিংগাইর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৫৮৭০৪১; পুরুষ ৩১৮১৭৬, মহিলা ২৬৮৮৬৫। মুসলিম ৫৩৬৪২০, হিন্দু ৪৫৬৮০, বৌদ্ধ ৪৩৭৮, খ্রিস্টান ৪২১ এবং অন্যান্য ১৪২।
জলাশয় প্রধান নদী: বংশী, তুরাগ, ধলেশ্বরী।
প্রশাসন সাভার থানা গঠিত হয় ১৯১২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১২ | ২০৭ | ৩৭৩ | ১২৭৫৪০ | ৪৫৯৫০১ | ২০৯৬ | ৬৭.০৩ | ৫৯.৯৫ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৩৭.৫৬ | ৯ | ৫৫ | ১২৭৫৪০ | ৩৩৯৬ | ৬৭.০৩ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
আমিনবাজার ১৫ | ২৭০৩ | ১৫৬৯৪ | ১৪২৯৭ | ৪৫.৩৬ |
আশুলিয়া ১৮ | ৬৪৫১ | ২২৫০৫ | ১৯৪৩৯ | ৫৬.৪৯ |
ইয়ারপুর ৯৪ | ৬৫৬৩ | ১৩৯১৮ | ১১৬৯৪ | ৫৪.৮৮ |
কাউন্দিয়া ৫০ | ২৮৩৫ | ১০৩৮৬ | ৯৬৭৯ | ৫২.৬৫ |
তেঁতুলঝোড়া ৮৯ | ৩৮৪৩ | ২৩৪২৪ | ১৮৫৫৪ | ৫১.৭৬ |
ধামসোনা ৩৯ | ৮০৯৮ | ৪০৪১৯ | ৩৬৪৮৩ | ৬৬.০০ |
পাথালিয়া ৭২ | ৭১০২ | ৩৪৭০৭ | ৩০০৯৯ | ৬৩.৭৫ |
বনগ্রাম ২২ | ৪৪৬০ | ১৩৩০৮ | ১১৪৩৪ | ৪৪.১১ |
বিরুলিয়া ৩৩ | ৭৪৪৮ | ১২৭২৬ | ১১০৩৪ | ৪৩.৬৬ |
ভাকুর্তা ৩৩ | ৫২০২ | ১৯২২০ | ১৭০৮৮ | ৩৯.৪৯ |
শিমুলিয়া ৮৩ | ৮৫৬৪ | ২২৩৬২ | ১৯১৬৭ | ৪৬.২১ |
সাভার ৭৮ | ১৩৬৫ | ৮৭৯৭ | ৮০৫৪ | ৬০.৭১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হরিশচন্দ্র রাজার ভিটা (৮ম শতক), বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ৭ম এবং ৮ম শতকে সাভার ‘সম্ভোগ’ নামক রাজ্যের রাজধানী ছিল। রাজা হরিশচন্দ্র এই রাজ্যের রাজা ছিলেন। সাভারের বিভিন্ন অঞ্চলে আবিস্কৃত ৬ষ্ঠ শতাব্দীর অনুলিখন হতে দেখা যায়, ওই সময়ে এখানে বহু বিদেশী সওদাগরের আগমন ঘটে। ১৯৭১ সালের ১৪ ই নভেম্বর নাসিরউদ্দিন ইউসুফের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ লড়াইয়ে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গোলাম দস্তগীর টিটো শহীদ হন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাঁর স্মরণে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১: জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গণকবর (নবীনগর); স্মৃতিস্তম্ভ ২: সাভার ডেইরী ফার্ম গেট সংলগ্ন, সংসপ্তক (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়); স্মৃতিসৌধ ২: জাতীয় স্মৃতিসৌধ (নবীনগর)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩১৮, মন্দির ৭৮, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ডেইরী ফার্মের মসজিদ, সাভার ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, সাভার দক্ষিণপাড়া হরির আখড়া মন্দির, পঞ্চবটি আশ্রম মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৮.২%; পুরুষ ৬৪.১%, মহিলা ৫১.১%। বিশ্ববিদ্যালয় ৩, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ১, আইন কলেজ ১, কলেজ ২৬, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট ১, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৪, কিন্ডার গার্টেন ১০৪, মাদ্রাসা ১১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭০), গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), শিমুলিয়া এসপি হাইস্কুল (১৯১৪)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী জাগ্রত কণ্ঠ, সাভার বার্তা, সাভার কণ্ঠ, গণভাষ্য।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ২০০, গলফ্ ক্লাব ১, শিশু সংগঠন ১, মানবাধিকার সংগঠন ২, মহিলা সংগঠন ১, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১, ফিল্ম সোসাইটি ৩, নাট্যদল ৫, নাট্যমঞ্চ ১, সংগীত একাডেমি ৫, যাত্রাপার্টি ১, সিনেমা হল ৫।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বিনোদন কেন্দ্র সেনানিবাস, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ বেতার, বিকেএসপি, জাতীয় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আনবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্র, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি, বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভার যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টার, হরিশচন্দ্র রাজার ভিটা (৮ম শতক), বৌদ্ধ বিহার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২০.৪৬%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৯%, শিল্প ২.৮২%, ব্যবসা ২০.৫৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.৭৫%, চাকরি ২৮.৭৪%, নির্মাণ ২.৮৪%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৬৭% এবং অন্যান্য ১২.৯০%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪২.৯৪%, ভূমিহীন ৫৭.০৬%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, চীনাবাদাম, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, আশা কুমারী ধান, তিল, তিসি, কালীমটর, রাধুনী সচ, মিঠা সচ, কাউন, মাষকলাই।
প্রধান ফল-ফলাদিব কাঁঠাল, জলপাই, কামরাঙা, পেঁপে, আম, পেয়ারা, জাম, কলা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৫২৬, হাঁস-মুরগি ৭৫৪, হ্যাচারি ৫।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৬৮ কিমি; নৌপথ ৪৪ নটিক্যাল মাইল। কালভার্ট ৯২।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি ও মোষের গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, সিরামিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, ট্রান্সফর্মার ইন্ডাস্ট্রিজ, অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, ফার্মাসিউটিক্যাল্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বিস্কুট ও ব্রেড ফ্যাক্টরি, পেইন্টস ফ্যাক্টরি, প্রিন্টিং এন্ড ডাইং ফ্যাক্টরি, কোল্ড স্টোরেজ, অয়েল মিলস্, ওয়েল্ডিং কারখানা, স’মিল, জুতার কারখানা, সাবান কারখানা, পাটকল, ইটভাটা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৪, মেলা ৮। সাভার বাজার, নবীনগর বাজার, আমিন বাজার, বলিভদ্র বাজার, বগাবাড়ী বাজার, আশুলিয়া হাট, সাভার হাট, শিমুলিয়া হাট, কাঠগড়া হাট, সাদুল্লাপুর হাট, ভাকুর্তার হাট এবং দারোগালী বয়াতীর মেলা (নয়ার হাট), বাহাত্তর প্রহর মেলা (সাভার), ঘোড়াপীরের মেলা (নলাম), মহররমের মেলা (কাতলাপুর) ও পৌষমেলা (ধামসোনা) উলেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কাঁঠাল, পেঁপে, গাছের চারা, ফুল, ট্রান্সফর্মার, ছাপা দ্রব্য, ইলেক্ট্রনিকস দ্রব্য, কাপড়, রং, ঔষধ, তৈরি পোষাক, কনফেকশনারীজ, সাবান, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাংস, ইট।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিদ্যুৎতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৯.৪৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.২৪%, ট্যাপ ৮.১৬%, পুকুর ০.১৯% এবং অন্যান্য ২.৪১%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৫.৯৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩০.০৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.৯৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ২, ক্লিনিক ৪০। উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র: সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সাভার ক্যান্টনমেন্ট) ১, কোরিয়া বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল ২।
এনজিও প্রশিকা, আশা, ব্র্যাক, ওয়ার্ল্ড ভিশন, স্বনির্ভর বাংলাদেশ। [অমল সাহা]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সাভার উপজেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।