পূর্বধলা উপজেলা
পূর্বধলা উপজেলা (নেত্রকোনা জেলা) আয়তন: ৩০৮.০৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৮´ থেকে ২৫°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৭´ থেকে ৯০°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দুর্গাপুর ও ধোবাউড়া উপজেলা, দক্ষিণে গৌরীপুর উপজেলা, পূর্বে নেত্রকোনা সদর উপজেলা, পশ্চিমে ফুলপুর ও গৌরীপুর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৮০৩৭২; পুরুষ ১৪৩০০৮, মহিলা ১৩৭৩৬৪। মুসলিম ২৬৪৭১২, হিন্দু ১৪৩১১, বৌদ্ধ ৭৬৮, খ্রিস্টান ৬২ এবং অন্যান্য ৫১৯। এ উপজেলায় গারো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় ধলাই, সোয়াই, মোগরা, কালীহর, কংশ ও লাউয়ারী নদী এবং মান্দারুয়া, সিংগুয়ার, আখতার, রাজধলা ও আখতার বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন পূর্বধলা থানা গঠিত হয় ১৯১৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১১ | ২২৩ | ৩৩৪ | ১৯৩৫১ | ২৬১০২১ | ৯১০ | ৪৩.২২ | ৩৪.৯৮ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৭.৯৩ | ৩ | ১৯৩৫১ | ২৪৪০ | ৪৩.২২ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
আগিয়া ০৭ | ৬৬০৯ | ১৩০৩৫ | ১৩১২৩ | ৩২.০৪ |
খলিশাপুর ৭৯ | ৭৭৮৯ | ১৩২৬২ | ১২৭৮৮ | ৪২.০৯ |
গোহালাকান্দা ৫৫ | ৫৬৯৭ | ১৪২৩০ | ১৪০৬৩ | ৩৫.২০ |
ঘাগড়া ৩৯ | ৮৯৩৮ | ১৪০৫৬ | ১৩৩৬৯ | ২৮.৭৮ |
জারিয়া ৭১ | ৫৬২৭ | ১২৮০৮ | ১২০০৫ | ৩৫.৫৩ |
ধলামুলগাঁও ৩১ | ৮৭১২ | ১৩০৫১ | ১১৮৯০ | ৩৮.৪১ |
নারান্দিয়া ৮৭ | ৫৪৬৪ | ১১৫৮৭ | ১১০০৫ | ৩৬.৫১ |
পূর্বধলা ৯৪ | ৬০৭৫ | ১৪৪৭০ | ১৩৪৯৬ | ৪০.৬৫ |
বিশকাকুনী ২৩ | ৭১৮৬ | ১২১৪১ | ১১৯৪৪ | ৩১.৪৯ |
বৈরাটি ১৫ | ৫৭৪৯ | ১০৩৯৮ | ১০০৭২ | ৩৭.২৯ |
হোগলা ৬৩ | ৮৪৩৮ | ১৩৯৭০ | ১৩৬০৯ | ৩৩.৪৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মুগল আমলে নির্মিত সুনাইকান্দা ও লেটিরকান্দা মসজিদ, হোগলার প্রাচীন মন্দির, বাঘবেড় ও নারায়ণডহর জমিদার বাড়ী।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি পাগলপন্থী মতাদ©র্শর জনক করম শাহ্ এবং তাঁর পুত্র টিপু শাহ্ এই উপজেলার লেটিরকান্দা গ্রামে ১৭৯২ সালে বসতি স্থাপন করেন এবং এখান থেকে পাগলপন্থী বিদ্রোহ ও কৃষক বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। ১৭৮৬ সাল থেকে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে শেরপুর পরগনায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। ২৯ এপ্রিল ১৯৭১ সালে পাক হানাদাররা পূর্বধলায় প্রবেশ করে। ১ মে পূর্বধলার স্বনামধন্য ডাক্তার হেম বাগচী, তার ভগ্নীপতি হরিদাস সিংহ ও কাজের লোক মেঘুকে বাড়ীর আঙ্গিনায় নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (ত্রিমোহনী)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯৭, মন্দির ২৭। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: পূর্বধলা বাজার জামে মসজিদ, হোগলা নৃসিংহ জিউ আখড়া মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৫.৫৮%; পুরুষ ৩৮.৩৮%, মহিলা ৩২.৭১%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৪, মাদ্রাসা ১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পূর্বধলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৯), শ্যামগঞ্জ হাফেজ জিয়াউর মহা বিদ্যালয় (১৯৭২), পূর্বধলা রাবেয়া আলী মহিলা কলেজ (১৯৯৪), পূর্বধলা জগৎমনি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), এন জারিয়া ঝাঞ্জাইল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), খলিশাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), নারায়নডহর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), দেওটুকোন হাইস্কুল (১৯১৯)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, ক্লাব ৩৩, সিনেমা হল ৩, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ১০, নাট্যদল ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৫.০২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৭৪%, শিল্প ০.৫১%, ব্যবসা ৮.২১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৪৪%, চাকরি ৩.৪৮%, নির্মাণ ১.০১%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৮% এবং অন্যান্য ৫.১৮%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিসি, খেসারি, কলাই, মিষ্টি আলু, অড়হর, আদা, হলুদ।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, বেল, কলা, জাম, লেবু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪, হাঁস-মুরগি ২৬।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬২৫ কিমি; নৌপথ ৭ কিমি, রেলপথ ২২ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরী, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫, মেলা ২। পূর্বধলা, হোগলা, ঘাগড়া, হিরণপুর ও শ্যামগঞ্জ বাজার এবং বারুনী ও পূর্বধলা চৈত্র সংক্রান্তির মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১১.১১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৪৭%, ট্যাপ ০.৩৫%, পুকুর ১.৫৭% এবং অন্যান্য ৭.৬১%। এ উপজেলার ৩৩% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৪.৯০% (গ্রামে ১৩.৫৪% ও শহরে ৩৪.২৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৩.৯৬% (গ্রামে ৫৪.৬৪% ও শহরে ৪৪.২৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৩১.১৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৫ সালের জুন মাসে এক টর্ণেডোতে জারিয়া আনসার ক্যাম্পটি বিধ্বস্ত হয় এবং ১৮ জন আনসার সদস্য মারা যায়। ৮১ জন গুরুতর আহত হয়েছিল।
এনজিও ব্র্্যাক, কারিতাস, প্রশিকা, আশা, শিখা। [সৈয়দ মারুফুজ্জামান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পূর্বধলা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।