পাকুল্লা মসজিদ
পাকুল্লা মসজিদ টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার পালপাড়ায় (পাকুল্লা) অবস্থিত। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের এক পাশে মির্জাপুরের উত্তরে পাকুল্লা বাজারের পশ্চিমে মসজিদটির অবস্থান।
আয়তাকৃতির পাকুল্লা মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। বাইরে থেকে মসজিদটির পরিমাপ ১৪.৭৭ মিটার × ৫.৮৫ মিটার। এর দেয়াল ১.২৫ মিটার প্রশস্ত। পাকুল্লা মসজিদের অভ্যন্তরভাগ আড়াআড়ি খাঁজ খিলান দ্বারা তিনটি অসম ভাগে বিভক্ত। খিলানগুলি পূর্ব ও পশ্চিম দেয়ালের নিচ থেকে উত্থিত। এ ধরনের খিলানের সাদৃশ্য দিল্লিতে অবস্থিত আওরঙ্গজেব এর মতি মসজিদ (আনু. ১৬৬২ খ্রি.), বর্ধমানে খাজা আনোয়ার শহীদের সমাধি (আ. ১৬৯৮ খ্রি.) এবং ঢাকার কাজী খাজা শাহবাজের মসজিদে (আনু. ১৬৭৯ খ্রি.) দেখা যায়। পাকুল্লা মসজিদের তিনটি গম্বুজই অষ্টভুজাকৃতির ড্রামের উপরে স্থাপিত এবং কেন্দ্রীয় গম্বুজটি পার্শ্ববর্তী অপর দুটি অপেক্ষা বৃহৎ।
আয়তাকৃতির মসজিদের উভয় দিকে একটি করে দোচালা রীতির ইট ও পলেস্তরায় নির্মিত কক্ষ রয়েছে। এ দুটি কক্ষ কি উদ্দেশ্যে নির্মিত তা স্পষ্ট বোঝা যায় না। সম্ভবত শিক্ষারত ছাত্রদের পড়ার স্থান অথবা মসজিদের ইমামের থাকার জায়গা হিসেবে কক্ষ দুটি ব্যবহূত হতো। দুটি কক্ষেই মসজিদের অভ্যন্তর ভাগ থেকে ঢোকার দরজা রয়েছে। পূর্ব দিক থেকেও কক্ষ দুটিতে প্রবেশপথ আছে। মসজিদের সম্মুখে তিনটি প্রবেশ পথ আয়তাকৃতির প্যানেলের মধ্যে স্থাপিত এবং উপরে তিনটি গম্বুজ। চারকোণে চারটি অষ্টভুজাকৃতির পার্শ্ব বুরুজ ছাদের উপর পর্যন্ত উঠে গেছে।
বুরুজগুলির উপরের ছত্রী এবং কুপোলা কলস ফিনিয়ালে সমাপ্ত হয়েছে। পার্শ্ব বুরুজ ও সংলগ্ন ক্ষুদ্র বুরুজগুলি কলস ভিত থেকে উত্থিত।
পশ্চিম দেয়ালের ভেতরে তিনটি অবতল মিহবার আছে। কেন্দ্রীয় মিহরাব চতুষ্ক্রেন্দ্রিক বহু খাঁজবিশিষ্ট এবং পার্শ্ব মিহরাবগুলি খাঁজবিহীন। কেন্দ্রীয় মিহরাব পার্শ্ব মিহরাবদ্বয় থেকে অপেক্ষাকৃত বড় এবং ঐতিহ্যগতভাবে বহির্দিকে বর্ধিত এবং উভয় দিকে জোড় স্তম্ভ রয়েছে। আর পার্শ্ববর্তী মিহরাবে একটি করে কলাম মিহরাবের উভয় পার্শ্বে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় মিহরাবের উত্তর পাশে রয়েছে তিন ধাপ বিশিষ্ট মিম্বার। সুডৌল কন্দাকার গম্বুজ পদ্ম ফুল আচ্ছাদিত কলস ফিনিয়ালযুক্ত। মসজিদের প্যারাপেট দেয়াল ও গম্বুজের নিচে ড্রামের চারদিকে পদ্মপাপড়ির মেরলোন নকশা সম্বলিত। মসজিদ গাত্র খোপ নকশায় অলংকৃত। দরজার স্প্যানড্রিলে ও মিহরাবের সর্বত্র আকর্ষণীয়ভাবে পলেস্তরার স্ট্যাকো নকশায় পদ্মপাপড়ির মেরলোন, দড়ি, পাতা, জ্যামিতিক নকশায় ও অন্যান্য ফুলেল নকশায় অলংকৃত। পাকুল্লা মসজিদে শিলালিপি না থাকায় এটি নির্মাণের তারিখ জানা যায় না। কিন্তু স্থাপত্য রীতির দিক দিয়ে অন্যান্য মধ্যযুগীয় তারিখযুক্ত খাজা আনোয়ার শহীদের সমাধি (আনু. ১৬৯৮ খ্রি.), মানিক পীরের দরগাহ (১৬৯৭), করতলব খান মসজিদ (১৭০৪ খ্রি.) ইত্যাদি ইমারতের সাথে মিল থাকায় পাকুল্লা মসজিদ সতেরো শতক অথবা আঠারো শতকের প্রারম্ভে নির্মিত বলে অনায়াসে ধরা যায়। বর্তমানে মসজিদটি ভগ্নদশাগ্রস্ত এবং এর দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। [আয়শা বেগম]