ফুলপুর উপজেলা
ফুলপুর উপজেলা (ময়মনসিংহ জেলা) আয়তন: ৫৮০.২১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৪´ থেকে ২৫°০২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৩´ থেকে ৯০°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা, দক্ষিণে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, পূর্বে গৌরীপুর ও পূর্বধলা, পশ্চিমে নকলা উপজেলা।
জনসংখ্যা ৫২৪৭২০; পুরুষ ২৬৯৯৮০, মহিলা ২৫৪৭৪০। মুসলিম ৫০৪০৭৯, হিন্দু ১৮৬৪৪, বৌদ্ধ ১০৭২, খ্রিস্টান ১৬৫ এবং অন্যান্য ৮১২। এ উপজেলায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় ভোগাই, কাকুড়িয়া, দেওড়, মোগরা, কোমা ও সোয়াই নদী এবং কোমা, দেওমারা, হাড়িয়া ও খৈলাকুড়ি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ফুলপুর থানা গঠিত হয় ১৮৭৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ২০ | ৩৭৭ | ৪০৯ | ১৫৭৫৭ | ৫০৮৯৬৩ | ৯০৪ | ৪৫.১ | ৩২.৭ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৮.২৮ | ৬ | ১৫৭৫৭ | ১৯০৩ | ৪৫.১ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন(একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | |
পুরূষ | মহিলা | |||
কাকনী ৪০ | ৬২৭২ | ১২৯৭৭ | ১২০৪৬ | ৩০.৩০ |
কামারগাঁও ৪৫ | ৬৫৭৫ | ১০৬৯৮ | ১০৩৪০ | ৩৪.৫০ |
কামারিয়া ৪৯ | ৭১৭০ | ১৩৬৫৬ | ১২৭৬৮ | ৩৫.৪৬ |
গালাগাঁও ৩৬ | ৭৪৩৯ | ১৪১৭৮ | ১৩৫১৪ | ৩.৯৯ |
ছন্দরা ৮১ | ৬১৯৩ | ১২৫৫১ | ১১৬৫৯ | ২৮.১৮ |
ঢাকুয়া ৩১ | ৬৯৬৩ | ১১৩৩২ | ১০৮৭৯ | ৩২.৯৬ |
তারাকান্দা ৯৪ | ৭৭৪৮ | ১৫০৬৫ | ১৩৯০৯ | ৩৪.২৯ |
পয়ারী ৫৪ | ৬৬৮৮ | ১৬৩৩০ | ১৫১৭১ | ৩৩.৮৭ |
ফুলপুর ৫৮ | ৭৩১৬ | ১৬৭৫৭ | ১৫২১০ | ৩৬.৯৪ |
বওলা ২৭ | ৬৮৯০ | ১২০৮২ | ১১৮৪৫ | ৩৯.৫৯ |
বানিহলা ১৩ | ৬৭৭০ | ১১৬০৮ | ১০৭৬০ | ৩৩.৮১ |
বালিখা ১২ | ৭০৪৮ | ১২৯৯২ | ১২২৮৭ | ২৯.৬৭ |
বালিয়া ১১ | ৬০৩৩ | ১০৯৮৬ | ১০৮০৫ | ৩৫.১০ |
বিসকা ২২ | ৮৬৪১ | ১৬৩৪৯ | ১৫৭২২ | ৩৩.৩৩ |
ভাইটকান্দি ১৮ | ৫৯৬৭ | ১৩০১৯ | ১২২১৪ | ২৯.১৯ |
রূপসী ৭৬ | ৭১৩৪ | ১৪১৭৩ | ১৩৪৫৫ | ৩৬.৮৬ |
রহিমগঞ্জ ৬৩ | ৭৪১৭ | ১৪১৯০ | ১৩২১০ | ৩১.৬২ |
রামপুর ৭২ | ৬৫০১ | ১১৮৮৬ | ১১৩৫৬ | ৩৪.৯০ |
রামভদ্রপুর ৬৭ | ৭৩৫৯ | ১৩৫৩৪ | ১৩১২৭ | ৩১.৫২ |
সিংহেশ্বর ৯০ | ৯৩৫২ | ১৫৬১৭ | ১৪৪৬৩ | ২৮.৮২ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ দত্তসহ ৯ জন বাঙালিকে পাকসেনারা ফুলপুর ইউনিয়নের সরচাপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে গুলি করার পূর্বেই তিনি পানিতে ডুব দিয়ে পালিয়ে আসেন। এছাড়া ছন্দরা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সম্মুখ লড়াইয়ে ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ ১ (সরচাপুর)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭৬৫, মন্দির ৩৯, গির্জা ৫, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ফুলপুর বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ, তারাকান্দা জামে মসজিদ, ফুলপুর সাহাপাড়া মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৩.১%; পুরুষ ৩৫.৪%, মহিলা ৩০.৭%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৩২, মাদ্রাসা ১৭৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফুলপুর ডিগ্রি কলেজ, ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ, বওলা কলেজ, চান্দপুর কলেজ, ফুলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), তালদীঘি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), মোজাহারদি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), বাট্টা ভাটপাড়া এস.সি. উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), গোকুলচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), তারাকান্দা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), ফুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রামভদ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সিংহেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়, রহিমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, রূপসী উচ্চ বিদ্যালয়, বওলা উচ্চ বিদ্যালয়, বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বাদরাকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়, গালাগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, কাকনী মডেল একাডেমী, চাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়, চরগোয়াডাংগা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৫)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: ফুলপুর বার্তা, তারাকান্দা বার্তা, আবহমান।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৮, নাট্যদল ৫, সিনেমা হল ৪।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৪.৫১%, অকৃষি শ্রমিক ৪.০০%, শিল্প ০.৩৯%, ব্যবসা ৭.১৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.২২%, চাকরি ২.৭%, নির্মাণ ০.৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১১% এবং অন্যান্য ৮.০৪%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬১.২১%, ভূমিহীন ৩৮.৭৯%। শহরে ৪৪.৩২% এবং গ্রামে ৬১.৭০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পিঁয়াজ, রসুন, ডাল, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, পাট।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, তরমুজ।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২০০, গবাদিপশু ১৭৬, হাঁস-মুরগি ৫২, হ্যাচারি ৮, নার্সারি ১৩৬।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭০.৮৮ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ৪৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ১১৩৯.৬০ কিমি; রেলপথ ২ কিমি; নদীপথ ৬৪.৭৯ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইস মিল ১৬, স’মিল ১৮, ইটভাটা ১২, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি ৫, বেকারি ২০, বিড়ি কারখানা ১, ওয়েল্ডিং কারখানা ২০।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪৪। আমুয়াকান্দা বাজার, তারাকান্দা বাজার, বালিয়া বাজার, ভাইটকান্দি বাজার ও কাশীগঞ্জ বাজার উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চাল, গম, পিঁয়াজ, রসুন।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪.১৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.১৮%, ট্যাপ ০.৪১%, পুকুর ০.৩৭% এবং অন্যান্য ৬.০৪%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৩.২৫% (গ্রামে ১২.৩৮% এবং শহরে ৪৩.৪২%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৪.১৬% (গ্রামে ৫৪.৭৪% এবং শহরে ৩৪.১৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩২.৫৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১২, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ৭১।
এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশন, কারিতাস, ব্র্যাক, আশা, আহসানিয়া মিশন, সিডা, টিএসএস। [নূরুল আমিন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফুলপুর উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।