ফল
ফল (Fruit) বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের উষ্ণমন্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমন্ডলীয় ফল পাওয়া যায়। ব্যাপকভাবে জন্মানো ফলগুলির মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, কালো জাম, আনারস, কলা, লিচু, লেবু, পেয়ারা, আতা, কতবেল, চালতা, আমলকি, পেঁপে, তেঁতুল, তরমুজ, বাংগি, কাজু বাদাম, ডালিম, ডেউয়া, তাল, বিলাতি গাব, বিলাতি আমড়া, জামরুল, জলপাই ও বরই/কুল। অনেক অপ্রধান খাবার উপযোগী ফল রয়েছে যেগুলি বন্য ও চাষকৃত উভয়রূপে পাওয়া যায়, যেমন লটকন, ডেউয়া, বেত, গাব প্রভৃতি। বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের প্রধান ও অপ্রধান ফল পাকার সময় মে, জুন ও জুলাই মাসকে ফলের মাস হিসেবে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। কিছু ফল সারা বছর পাওয়া যায়। এদের মধ্যে রয়েছে পেঁপে, সফেদা, নারিকেল ও কলা। সাধারণত আমদানিকৃত ফলসমূহের মধ্যে রয়েছে কমলা, আপেল, ডালিম, আঙ্গুর, খেজুর, ম্যান্ডারিন ইত্যাদি।
কয়েকটি স্থানে আঙ্গুর ব্যতীত বাংলাদেশে উষ্ণমন্ডলীয় ফলের চাষ সফল হয় নি। সিলেটের কিছু নির্দিষ্ট এলাকা এবং রাঙ্গামাটি (সাজেক) ও বান্দরবান (রামু) জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমলার চাষ সীমাবদ্ধ।
ফলগাছ মানুষের সভ্যতা খাদ্যফসল ও ফলজ বৃক্ষের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। একেবারে আদিকালে সর্বপ্রথম নির্বাচিত ফলজ বৃক্ষ হিসেবে খেজুর চাষ হতো বলে ধারণা করা হয়। আদি ভারতবর্ষের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন উষ্ণমন্ডলীয় ফলগুলির একটি হলো আম যা চাষ করা হচ্ছে প্রায় ৬,০০০ বছর ধরে। ফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে।
প্রথাগতভাবে বসতবাড়ির পিছনের আঙিনার ফসল হিসেবে পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য ফলজ উদ্ভিদ রোপণ করা হয়।উনিশ শতকের শুরুতে খ্রিস্টান মিশনারি ও ইউরোপীয় উপনিবেশিকগণ উপমহাদেশে ফল বাগানের সংগঠিত চাষাবাদে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে।
বিশ শতকের প্রথম দিক থেকেই বহু ধরনের প্রধান ও অপ্রধান ফল বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। অধিকাংশ প্রধান ফলজ বৃক্ষ চিরসবুজ ধরনের যাদের মধ্যে আম, কাঁঠাল ও নারিকেল বাংলাদেশে জন্মানো ফলজ বৃক্ষের ৯০%। দেশের সবচেয়ে পরিচিত ফলজ বৃক্ষ আমের চাষাধীন ও বন্য মিলে প্রায় ৩,০০০ জাত রয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহে আমের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতগুলি জন্মে; ফলের ওজন হয় ১০০ থেকে ১০০০ গ্রাম; ফল পাড়ার সময় জুন-আগস্ট। আরেকটি জনপ্রিয় ফল কাঁঠালের উৎপত্তিস্থল ভারতের পশ্চিমঘাট, বর্তমানে সারাদেশে জন্মে, এটি উদ্ভিদজগতের সর্ববৃহৎ ফলের একটি যা ৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
উনিশ শতকের শুরুর দিকে চীন থেকে ভারতবর্ষে লিচুর প্রবর্তন হয়। অধিক শাখাযুক্ত চিরসবুজ এ বৃক্ষ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র ভালভাবে জন্মায়। কিন্তু উন্নতমানের ফল উৎপন্ন হয় দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর ও খুলনা অঞ্চলে। ফল পাড়ার সময় জুন ও জুলাই। নারিকেল সর্বত্র জন্মালেও দেশের দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মে; প্রতিটি গাছে গড়ে ৭০-৮০টি ফল ধরে; সারা বছর ফল পাড়া যায়। ডাব গ্রীষ্মের একটি জনপ্রিয় পানীয়; পরিপক্ক ফলের শাঁস (এন্ডোস্পার্ম) মিষ্টান্ন তৈরিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়।
আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে উষ্ণমন্ডলীয় আমেরিকা থেকে উদ্ভাবিত পেয়ারা গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে জন্মাতে দেখা যায়। সারা দেশে পাওয়া যায় ৫০টির মতো জাত যার অধিকাংশ চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও বরিশাল অঞ্চলে জন্মায়। ফলের ওজন ২০-৭০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে; জুলাই-সেপ্টেম্বরে ফল পাওয়া যায়। ছোট ফল বহনকারী মাঝারি আকারের বৃক্ষ কুল (বরই)। এর মানসম্পন্ন ফলের ওজন হয় ১০-৭০ গ্রাম; ফল পাওয়া যায় ফেব্রুয়ারি-মার্চে। অত্যন্ত সাধারণ ও জনপ্রিয় অপ্রধান ফলের মধ্যে রয়েছে কালোজাম। জামগাছ বড় আকারের বৃক্ষ; পরিপক্ক ফল কালো, লম্বাটে, ফলের অর্ধেকটাই বীজ; ফল পাকে জুলাই মাসে।
সফেদা আমেরিকার উষ্ণমন্ডল থেকে উদ্ভাবিত ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হয়। অন্যান্য সাধারণ অপ্রধান ফলগুলি হচ্ছে তেঁতুল, তাল, ডেউয়া, জলপাই, কামরাঙা, জামরুল, কাউ, লটকন, পানিয়ালা, মাকাল, চালতা, গাব, বিলাতি আমড়া, বিলাতি গাব, কতবেল, বেল, আতা ও আমলকি।
[জিয়া উদ্দিন আহমেদ, মোস্তফা কামাল পাশা ]
ফল উৎপাদন বাংলাদেশে সারা বছরই বিভিন্ন জাতের ফল জন্মে। তবে এখানকার আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল উৎপাদনের জন্য বেশী সহায়ক। এ দেশে সাধারণত ৯টি প্রধান ও ৪৮টি অপ্রধান ফলের উৎপাদন লক্ষ্য করা যায়। এদের চাষাধীন জমির পরিমাণ ১,৩৯,৫৩৫ হেক্টর। মোট উৎপাদন ৪৭,৩৪,১৪৫ মেট্রিক টন। প্রধান ফলগুলোর মধ্যে আম, কলা, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, লিচু ও কুল প্রায় শতকরা ৭৯ ভাগ জমি দখল করে রয়েছে। অবশিষ্ট শতকরা ২১ ভাগ জমিতে হয় অপ্রধান ফলগুলোর চাষ। বাংলাদেশে উৎপাদিত সাধারণ ফলগুলোর আওতাধীন জমির পরিমান ও ফলন নিম্নে সারণিতে উপস্থাপন করা হলো।
সাম্প্রতিককালে এদেশে ফলের উৎপাদন ধীর গতিতে বাড়ছে। ইদানীং কিছু বিদেশী ফলের আবাদও বাংলাদেশে হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় ফলের মোট সরবরাহ এখানে অপ্রতুল। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য দৈনিক মাথাপিছু কমপক্ষে ৮৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দৈনিক গড় প্রাপ্যতা হচ্ছে মাত্র ৩৫ গ্রাম। এর বন্টনও আবার সুষম নয়। ধনীরা বেশি খায়, গরিবদের অনেকেই তা পায় না। সে কারণে এ দেশে অপুষ্টিজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি।
বাংলাদেশে ফলের উৎপাদন মৌসুমভিত্তিক। অধিকাংশ ফলেরই উৎপাদন হয় মধু মাসে। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে দেশের মোট ফল উৎপাদনের শতকরা ৫৪ ভাগই উৎপাদিত হয় ও বাজারজাত করা হয়। বাকি শতকরা ৪৬ ভাগ ফলের উৎপাদন হয় অবশিষ্ট ৮ মাসে। মধু মাসে উৎপাদিত ফলগুলোর মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু ও আনারস অন্যতম। বছরের অন্য সময় উৎপাদিত ফলগুলোর মধ্যে আছে কুল, আমড়া, আমলকী, বেল, সফেদা, জলপাই, ডালিম, কামরাঙ্গা ইত্যাদি। পেঁপে ও কলা সারাবছরই উৎপাদিত হয়। অন্যান্য ফলের উৎপাদন যাতে বছরের বিভিন্ন সময়ে নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয় সে জন্য গবেষণা প্রয়োজন। মিশ্র ফল বাগান সৃষ্টি করেও সারাবছর ফলজ পুষ্টি সরবরাহ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের মৌসুমী ফল ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং ওমানে রফতানি হচ্ছে। রফতানিকৃত ফলগুলোর মধ্যে আছে কাঁঠাল, জাড়ালেবু, এলাচি লেবু, কুল, সাতকরা, আম, আমড়া, সুপারি, জলপাই ও পেয়ারা। দিনের পর দিন বিদেশে এগুলোর চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনে, চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিংগাপুর, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি ফল রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
এ দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে উন্নত জাতের অভাব। আমাদের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএআরআই থেকে ইতোমধ্যেই ৪০টি জাতের উন্নতমানের ফল উদ্ভাবন করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯টি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে আম, লিচু, পেয়ারা, নারিকেল, সফেদা, আমড়া, বাতাবি লেবু, কলা, জামরুল, অাঁশফল, কমলা, তইকর, পেঁপে ও কুলসহ নানা জাতের ফল। এগুলো সুস্বাদু এবং অধিক ফল উৎপাদনকারী। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই মাঠ পর্যায়ে তেমন দেখা যায় না। কৃষক পর্যায়ে এদের সম্প্রসারণ কম। তদুপরি গবেষণা খামারের সঙ্গে কৃষকের খামারে উৎপাদিত ফলের ফলন পার্থক্য অনেক, ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ থেকে পাঁচগুণেরও বেশি। দেশের কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে ব্যক্তি মালিকানাধীন ফল বাগান ও নার্সারিগুলোর আরো নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে এ ব্যবধান ঘোচানো সম্ভব। উৎসাহী কৃষকদেরকেও এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদেরকে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনের সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ফলের নতুন জাত ও গুণাগুণ সম্পর্কে তাদের নিয়মিত অবহিত করতে হবে। আমাদের অনেক ফল গাছের অঙ্গজ প্রজনন সম্ভব। এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হলে মাতৃ গাছের গুণাবলী অপরিবর্তিত থাকে। সুতরাং বিভিন্ন জাতের ফলের অঙ্গজ কলম সম্পর্কে চাষীদের পরামর্শ দিতে হবে।
ফল সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজার জাতকরণ আমাদের আর একটি প্রধান সমস্যা। ফলের উৎপাদন মৌসুমভিত্তিক বলে কৃষকরা এর ন্যায্য দাম পায় না। অনেক সময় উৎপাদকগণ বিক্রয় মূল্যের অর্ধেক দামও পায় না। কয়েক হাত বদলের মাধ্যমে ফল ভোক্তার হাতে পৌঁছায় বলে ভোক্তা প্রদত্ত দামের প্রায় অর্ধেকের বেশি নিয়ে যায় মধ্যস্বত্বভোগী। উপযুক্ত সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে শতকরা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য ফলের ভর মৌসুমে বিশেষ করে মধুমাসে বিদেশ থেকে ফল আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষণ নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে উৎসাহিত করতে হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৩০টি নিবন্ধীকৃত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প রয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল থেকে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ, ফলের রস, আচার, চাটনি, সস, ক্যান্ড আনারস, স্লাইসড ও ক্যান্ড আমের পাল্প ইত্যাদি উৎপাদন করছে। এদের কিছু পণ্য বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এ ধরনের শিল্পের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। অধিকন্তু কৃষকের উৎপাদিত ফল অভ্যান্তরীণভাবে বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবহন ও হিমায়িত সংরক্ষণের ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে হবে। তাছাড়া গাছ থেকে ফল সংগ্রহ ও প্যাকিং-এর ক্ষেত্রেও অনেক সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। [জাহাঙ্গীর আলম]
ফল ও ফলগাছের বালাই Arthropoda বর্গের ১৫০টিরও অধিক প্রজাতি বিভিন্ন ফল গাছকে আক্রমণ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে বলে জানা যায়। বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফলগাছ আক্রমণকারী প্রধান প্রধান আর্থ্রোপোড প্রজাতির মুখ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলো।
দুই ডজনেরও অধিক কীটপতঙ্গ এদেশে আম আক্রমণ করতে দেখা যায়, যদিও মাত্র কয়েকটিকে প্রধান বালাই হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদের মধ্যে পাতাফড়িং-এর তিনটি প্রজাতি Amritodus atkinsoni, Idioscopus clypealis ও I. niveosparsus সারাদেশে সবচেয়ে ক্ষতিকর।
পাঁচটি কীটপতঙ্গ ও একটি মাইট প্রজাতি লিচুর ফল, কান্ড, পাতা ও ফুলে আক্রমণ করে। এদের মধ্যে মাইট Aceria litchi, কান্ডছিদ্রকারী পোকা Zeuzera coffeae, বাকল ছিদ্রকারী পোকা Indarbela tetraonis ও ফল ছিদ্রকারী পোকা Argyroploce illepida মুখ্য বালাই হিসেবে পরিচিত। এসব কীটপতঙ্গের মধ্যে এদেশে লিচু মাইট ও লিচু ফল ছিদ্রকারী পোকাসমূহ সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি করে।
ছয়টি কীটপতঙ্গ পেয়ারাকে আক্রমণ করে বলে জানা যায়। এদের মধ্যে পেয়ারার মিলি বাগ, Phenococcus species, পেয়ারার মিলি স্কেলস Chloropulvinaria psidii, C. floccifera, জাবপোকা Aphis gossypii, পাতার উইভিল, Myllocerus discolor পাতাকে আক্রমণ করে, কান্ডছিদ্রকারী পোকা Aeolesthes holosericea ও ফলের মাছি Bactrocera dorsalis যথাক্রমে কান্ড ও ফল আক্রমণ করে।
চারটি কীটপতঙ্গ যেমন, ফলের বিটল Nodostoma viridipenis, ঘাস ফড়িং Aularches miliaris, কান্ডের উইভিল Cosmopolites sordidus ও Odoiporus longicollis কলার কান্ড, পাতা ও ফলকে আক্রমণ করে বলে জানা যায়। অবশ্য, কলার পাতা ও ফলের বিটল N. viridipenis সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে।
অনেক প্রজাতির কীটপতঙ্গ কুল আক্রমণ করে। এদের মধ্যে Tarucus theophrastus, Thiacidas postica ও Euproctis fraterna-এর লার্ভা এবং উইভিল Amblyrrhinus poricollis ও Myllocerus species পাতা ও ফুল খায়।
ডালিম আক্রমণকারী কীটপতঙ্গসমূহের মধ্যে Punica granatum, Porthesia scientillans ও Achaea janata-এর লার্ভা পাতা খেয়ে থাকে। ছাতরা পোকা Icerya purchasi গাছের রস চুষে খায়। ফলছিদ্রকারী পোকা Virachola isocrate সারাদেশে ডালিমের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
Elymnias undularis ও Nephantis serinopa-এর পত্রভুক লার্ভাকে নারিকেলের অপ্রধান বালাই হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাইনোসেরোস বিটল, Oryctes rhinoceros ও রেড পাম উইভিল, Rhynchophorus ferrugineus দেশে নারিকেল গাছের সবচেয়ে ক্ষতিকর বালাই।
কাঁঠালগাছ আক্রমণকারী তিনটি কীটপতঙ্গের কথা জানা যায়। কান্ড ছিদ্রকারী পোকা, Apriona germari-এর লার্ভা এবং বাড উইভিল, Ochyromera artocarpi অপ্রধান বালাই হিসেবে বিবেচিত। কাঁঠাল ছিদ্রকারী পোকা, Margaronia caesalis প্রধান বালাই।
বেশ কয়েক ধরনের লেবুজাতীয় ফল যেমন লেবু, কাগজিলেবু, জাম্বুরা, মাল্টা ও কমলা বাংলাদেশে জন্মে। বিশটিরও অধিক কীটপতঙ্গ ও মাইট লেবুজাতীয় ফল আক্রমণ করে বলে জানা যায়। লেবুজাতীয় ফলগাছের কান্ড ও শাখা আক্রমণকারী কীটপতঙ্গের মধ্যে কমলা গাছ ছিদ্রকারী পোকা Monohammus versteegi, কমলা গাছের কান্ড ছিদ্রকারী পোকা Chloridolum alcemene, কমলা গাছের শাখা ছিদ্রকারী পোকা Indarbela tetraonis এবং লেবুজাতীয় গাছের কান্ড ছিদ্রকারী পোকা Chelidonium cinetum এর কথা উল্লেখ করা যায়।
[মোঃ ইব্রাহিম আলী]
আরও দেখুন আনারস; আম; কমলা; কলা; কাঁঠাল; কামরাঙা; পেঁপে; পেয়ারা; লিচু।