ফাল্গুনী পূর্ণিমা
ফাল্গুনী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় উৎসব। বুদ্ধের স্মরণে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমায় এ উৎসব পালিত হয়। তাই এর অপর নাম ‘জ্ঞাতিমিলন পূর্ণিমা’ বা ‘জ্ঞাতি সম্মেলন তিথি’। বুদ্ধত্ব লাভের পর দীর্ঘকাল পিতা-স্ত্রী-সন্তানসহ জ্ঞাতিদের সঙ্গে বুদ্ধের সাক্ষাৎ হয়নি। সবার মতো পিতা শুদ্ধোদনও বুদ্ধদর্শনে উদ্গ্রীব হয়ে ওঠেন। তাই রাজা শুদ্ধোদন একদিন বুদ্ধের নিকট দূত পাঠান। দূত বুদ্ধবাণীতে আত্মহারা হয়ে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে বুদ্ধের নিকটই থেকে যায়। এমনিভাবে রাজপ্রাসাদের অনেকেই বুদ্ধের নিকট গিয়ে প্রব্রজিত হয়ে আর ফিরে আসে না। এদিকে শুদ্ধোদনের বুদ্ধদর্শন বাসনা তীব্রতর হয়ে ওঠে। বার বার দূত পাঠিয়ে তিনি হতাশ হন। অবশেষে শুদ্ধোদন কালুদায়ি নামে সিদ্ধার্থের এক বাল্যবন্ধুকে প্রেরণ করেন। বুদ্ধদেব তখন রাজগৃহের বেণুবন বিহারে দেশনারত অবস্থায় ছিলেন। কালুদায়ির নিকট পিতার মানসিক অবস্থার কথা শুনে বুদ্ধ যেতে সম্মত হন এবং একদিন কপিলাবস্ত্ততে গিয়ে পরিবারবর্গের সঙ্গে মিলিত হন। সেখানে তিনি পিতা শুদ্ধোদন, স্ত্রী যশোধরা এবং পুত্র রাহুলসহ অন্যান্যদের শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষা দেন। সে দিনটি ছিল ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিন। তাই এ পূর্ণিমা বৌদ্ধদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। এদিন চট্টগ্রামের বৌদ্ধ অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রামে মেলা বসে, যেমন শাক্যমুনি মেলা (ঢেমশা, সাতকানিয়া), আচারিয়ার মেলা (উনাইপুরা, পটিয়া), ধাতুমেলা (ইছামতি, রাঙ্গুনীয়া), বোধিমেলা (ফতেনগর, চন্দনাইশ), ধাতুমেলা বা ফাল্গুনী অষ্টমী (বরিয়া, আনোয়ারা) প্রভৃতি। [সুকোমল বড়ুয়া]