পূর্ববঙ্গ সারস্বত সমাজ
পূর্ববঙ্গ সারস্বত সমাজ সনাতন পদ্ধতিতে সংস্কৃত শিক্ষা পরিচালনার জন্য গঠিত একটি সংস্থা। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওয়ারির কে.পি ঘোষ স্ট্রিটস্থ নিজস্ব ভবনে এর মূল কার্যালয় ছিল।
সারস্বত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিক্রমপুর কালীপাড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ‘হিতোপদেশিনী সভা’ কর্তৃক পূর্ববঙ্গের সংস্কৃত টোল ও চতুষ্পাঠীর শিক্ষাধারা নিয়ন্ত্রিত হতো। পদ্মার ভাঙ্গনে গ্রামটি বিলুপ্ত হলে ঢাকার এই সারস্বত সমাজ সেই দায়িত্ব গ্রহণ করে। ঢাকা, কুমিল্লা, শ্রীহট্ট (সিলেট), ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর ও বরিশাল এই ৮টি জেলার সংস্কৃত পন্ডিতদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১০ সদস্যের কার্যকরী সংসদদ্বারা সমাজের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। স্মার্ত পন্ডিত মহামহোপাধ্যায় কালীকিশোর স্মৃতিরত্ন এবং ঢাকা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মহামহোপাধ্যায় প্রসন্নচন্দ্র বিদ্যারত্ন যথাক্রমে কার্যকরী সংসদের প্রথম সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সমাজ নিয়ন্ত্রিত পূর্ববঙ্গীয় টোল ও চতুষ্পাঠীর পাঠ্যবিষয়সমূহ ছিল ন্যায়, সাংখ্য, বেদান্ত, স্মৃতি, সাহিত্য, দর্শন (বাদার্থ), ব্যাকরণ, পুরাণ, আয়ুর্বেদ এবং জ্যোতিষ। সমাজ অনুমোদিত পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি ছিল: ঢাকা, সুধারাম (নোয়াখালী), কুমিল্লা, কলকাতা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, পটিয়া এবং কবিরাজপুর (ফরিদপুর)। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পূর্বাবধি সমাজের কর্মধারা পূর্ণভাবে অব্যাহত ছিল। ১৯৭১ সাল পর্যন্তও এটি ক্ষীণভাবে চালু ছিল, কিন্তু ওই বছর মুক্তিযুদ্ধের সময় এর মূল ভবন বেদখল হয়ে যাওয়ায় এর কার্যক্রম শিথিল হতে থাকে এবং এক সময় এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এখান থেকে সংস্কৃত বিষয়ে যেসব উপাধি প্রদান করা হতো তা সর্বভারতে মর্যাদার সঙ্গে স্বীকৃত হতো। [রবীন্দ্রনাথ সরকার]